অদূর ভবিষ্যতে আমি একটি পূর্ণাঙ্গ সিরাতগ্রন্থ লিখব—এটি আমার জীবনের সঞ্জীবনী স্বপ্ন। এমন স্বপ্ন, যে স্বপ্ন আমাকে বেঁচে থাকার এবং লেখালেখির প্রেরণা যোগায়। সেই প্রেরণা থেকে নবীজীবনের নানা সময়কে কলমবন্দ করার সাহস কবে তৈরি হয়েছিল, বলতে পারব না; তবে এই সাহস আমাকে আমার স্বপ্নের পথে সবসময় রাহবারি করেছে।

স্বপ্নের পথ চলতে গিয়ে সিরাত নিয়ে ইতিহাস লিখেছি, লিখেছি কবিতা-গল্প, লিখেছি গল্পভাষ্য—প্রিয়তমা, ৩১৩ এবং এই মৃত্যুঞ্জয়ী। লিখেই চলেছি। সিরাত নিয়ে আমার লেখালেখির কোনো বিরাম নেই। সিরাত নিয়ে লিখতে যেমন ভালো লাগে, সিরাত নিয়ে পড়তে ভালো লাগে তার চেয়ে বেশি। পড়তে গিয়ে যখন মনে হয়, এ বিষয়টা লিখে ফেলা দরকার, পাঠককে জানানো দরকার, অনেক ভুল ও ভ্রান্তির নিরসন হওয়া প্রয়োজন, তখন একটা বইয়ের গোড়াপত্তন হয়।

সিরাত নিয়ে লেখার আমার অন্যতম একটি কারণ হলো, আমি সিরাতপাঠকে প্রাঞ্জল ও আনন্দময় করতে চেয়েছি। আমার সেই ‘গল্পের ফুলদানি’ বইগুলো থেকে শুরু করে প্রিয়তমা এবং ৩১৩ ও মৃত্যুঞ্জয়ী, প্রতিটি বই আমি প্রমিত বাংলার প্রাঞ্জলতা ও সাবলীলতা দিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি। যাতে করে সিরাতের বইগুলো সাধারণ মানুষও কোনো প্রকার দুর্বোধ্যতা ছাড়া আনন্দ নিয়ে পড়তে পারে। খোদার শোকর, বইগুলো সাধারণ পাঠক থেকে শুরু করে বোদ্ধামহলেও সমানভাবে সমাদৃত হয়েছে। বাংলাভাষায় সিরাত অধ্যয়নে আমি এটাকে অন্যতম মাইলফলক হিসেবে গ্রহণ করব।

দেড় থেকে দুই বছর লাগল বইটা লিখতে। সময় নিয়ে লিখতে হয়েছে। সিরাতের প্রতিটি ঘটনাকে হাদিস ও ইতিহাসের সত্যতা ও মানদণ্ড দিয়ে যাচাই করে তারপর সেটিকে গল্পভাষ্যে রূপ দেয়া হয়েছে। এমন নয় যে আট-দশটা সিরাতগ্রন্থ সামনে নিয়ে সেগুলো থেকে কপি-কাটিং করে ব্যাস একটা বইয়ে রূপ দিয়ে দেয়া হলো। অনেকে এমনটাই মনে করে। একেকটি ঘটনাই শুধু নয়, একটা নাম বা একজন ব্যক্তির গোত্রপরিচয় তালাশ করতে গিয়ে আমার পুরো দিন চলে গেছে বই আর ইন্টারনেট ঘেঁটে। কখনো একটা সঠিক দিন-তারিখ নির্ধারণ করতে আমাকে দশটা সিরাতগ্রন্থের দ্বারস্থ হতে হয়েছে এবং প্রতিটি গ্রন্থের ভিন্ন ভিন্ন দিন-তারিখ নানা পদ্ধতিতে যাচাই ও আধুনিক ক্যালেন্ডারের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে চয়ন করতে হয়েছে। এমন শত শত ঘটনা, নাম, তারিখ বিশুদ্ধতার নিক্তিতে মেপে তারপর গ্রন্থিত হয়েছে এ বইয়ে।

যতটা সহজ দেখা যায়, অতটা সহজ নয় সিরাত বা ইতিহাস নিয়ে লেখা।