লেখার মধ্যে দরুদ যেমন (সা.) ও দোয়া যেমন (আ.) (রা.) (রহ.) (দা.বা) ইত্যাদি সংক্ষিপ্তকরণ শব্দাবলি নিয়ে নিজস্ব কিছু ভাবনা শেয়ার করি।

আমরা লেখার মধ্যে নবীজির (সা.) নাম বা গুণবাচক নাম যখন ব্যবহার করি তখন কেউ কেউ পূর্ণ দরুদ ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ লিখি, আবার অনেকে সংক্তিপ্তভাবে (সা.) লিখি। দুটোই দুই দৃষ্টিকোণ থেকে ঠিক আছে। সে ব্যাপারে কথা বলছি না।

আমার যেটা ভাবনা, আমরা যখন নামের পরে দরুদ বা দোয়াকে পরবর্তী বিভক্তির (-এর বা -কে) সঙ্গে মিলিয়ে পড়ি, তখন সেটার অর্থ কী দাঁড়ায়? আমি কিছু উদাহরণ দিচ্ছি তাহলে বিষয়টি বুঝতে আরও সুবিধা হবে। যেমন, আমরা লিখি ‘নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জন্ম’। এখানে তাহলে পুরো বাক্যটার বাংলা অর্থ কী দাঁড়াল? নবীজি (আল্লাহ তাঁর ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন)-এর জন্ম। অথবা ‘নবীজি (সা.)-কে ভালোবাসতে হবে’ এই বাক্যের অর্থ দাঁড়ায় ‘নবীজি (আল্লাহ তাঁর ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন)-কে ভালোবাসতে হবে।

এখানে অর্থগতভাবে দেখলে দেখা যাবে, বাক্যে নবীজির জন্ম না হয়ে যেন জন্ম হচ্ছে দরুদের; কিংবা ভালোবাসা কথাটাও অনুসর্গের ব্যবহার হিসেবে সম্বন্ধিত হচ্ছে দরুদের প্রতি, নবীজির প্রতি নয়।

অর্থগত একই সমস্যা দেখা দেয় অন্যান্য দোয়ার সংক্ষিপ্তকরণ শব্দাবলিতেও। যেমন মুসা (আ.)-এর লাঠি, এ বাক্যের অর্থ দাঁড়ায় মুসা (তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)-এর লাঠি। আবু বকর (রা.)-এর জন্ম, এ বাক্যের অর্থ হয় আবু বকর (আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন)-এর জন্ম। তেমনিভাবে এমন বাক্য ‘আশরাফ আলি থানভি (রহ.)-কে জানতে হবে’, এর অর্থ দাঁড়ায় ‘আশরাফ আলি থানভি (তার ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক)-কে জানতে হবে।

অর্থগতভাবে দরুদ ও দোয়ার এমন ব্যবহার আমার কাছে ভুল মনে হয়। আমি নিজেও আগে এভাবেই লিখেছি। কিছু জায়গায় খটকা লাগার কারণে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করার পর মনে হলো, এর একটা সমাধান হওয়ার দরকার। কেননা বাংলা বাক্যের মধ্যে নবীজির নামের পর দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব এবং সাহাবি ও পুণ্যময় ব্যক্তিত্বের নামের পর দোয়া পাঠ করা ঐচ্ছিক। ওয়াজিব দরুদ ও ঐচ্ছিক দোয়া কোনোটাই কিন্তু বাক্যের পূর্বাপর কোনো শব্দের সঙ্গে অঙ্গীভূত হচ্ছে না। এগুলো বাক্যের ভাব প্রকাশ করার ক্ষেত্রেও কোনো ভূমিকা রাখছে না। সুতরাং এসব শব্দাবলি পাঠের সময় বা কথা বলার সময় আলাদাভাবে দরুদ ও দোয়া হিসেবে উচ্চারণ করাই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি।

এখন সমস্যার সমাধান যেটা হতে পারে, লেখার ক্ষেত্রে দোয়ার পরে যেসব বিভক্তি ব্যবহার হয় যেমন ‘এর’, ‘কে’ ইত্যাদি পদ উদ্দিষ্ট ব্যক্তির নাম বা গুণবাচক নামের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে এবং দরুদ ও দোয়া পরবর্তীতে ফার্স্ট ব্র্যাকেটে (প্রথম বন্ধনী) ব্যবহার করতে হবে। কেউ যদি ব্র্যাকেট ব্যবহার না করতে চান, সেটাও করতে পারেন। তবে বিভক্তিগুলো অবশ্যই নাম বা গুণবাচক নামের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা উদাহরণ দিচ্ছি:

* নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জন্ম

* নবীজিকে (সা.) ভালোবাসতে হবে

* রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সঙ্গে সাহাবি

* আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভালোবাসি

* নবী মুসার (আলাইহিস সালাম) লাঠি

* নবী সুলাইমানকে (আ.) দান করেন

* আবু বকরের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) নবীপ্রেম

* উমর ফারুককে (রা.) খলিফা করা হলো

* ইমাম আবু হানিফার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জ্ঞানসাধনা

* আশরাফ আলি থানভিকে (রহ.) জানতে হবে

অনেকে হয়তো মনে করছেন, বাক্যের মধ্যে এভাবে দরুদ ও দোয়া ব্যবহারের ফলে এহতেরাম বা সম্মান হয়তো ক্ষুন্ন হচ্ছে। ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়। আপনি বহুদিন থেকে এটার ভুল ব্যবহার শুনে আসছেন বলে আপনার কাছে মনে হয়েছে এটাই এহতেরাম। মূলত দরুদ ও দোয়া এখানেও পড়া হচ্ছে, একই এহতেরামের সঙ্গেই পড়া হচ্ছে। তবে আগে আপনার পাঠ করা দরুদ ও দোয়ার সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হওয়ার ফলে যে ভুল অর্থ দাঁড়াত, এখন সেটা শুদ্ধভাবে উচ্চারিত হচ্ছে।

আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। কারো যদি এ ব্যাপারে ভিন্ন কোনো মতামত থাকে বা এর চেয়ে উত্তম কোনো ব্যবহার জানা থাকে, জানিয়ে বাধিত করবেন।

ছবি: ছবিটি সম্ভবত তোলা হয়েছিল ২০১৯ সালে rokomari.com-এর কাওরান বাজারস্থ অফিসে। ইসলামি লেখকদের একটি মতবিনিময় সভা হয়েছিল। ছবিতে এহসান সিরাজ Faruk Ferdous আবদুল্লাহ আল ফারুক Zahir Uddin Babor-কে গভীর মনোযোগী শ্রোতা হিসেবে দেখতে পাচ্ছেন।

May be an image of 4 people, people standing, people sitting and indoor