প্রতিদিন প্রত্যন্ত জনপদ থেকে ঢাকা মহানগরে পাড়ি জমায় শত শত মানুষ। তারা সঙ্গে করে নিয়ে আসে অজস্র রূপকথা। সে রূপকথা তাদের ভেতরে বুক চাপড়ে মরে। এই নগরীতে রূপকথা কে শোনে! কী দাম তার ইট আর হর্নের ঠাস বুনটের ভীড়ে! রূপকথা ধিকিধিকি মরে যায়। গল্প শোনার মানুষ পাওয়া দায়!

আজ একটা টং দোকানের পাশে চা খেতে বসেছি দুপুরে। মধ্যবয়সী তিনজন হকার বসে বিড়ি ফোঁকার জিরানি দিচ্ছিল। কাঁচাপাকা দাড়ির ভদ্রলোক বেশ আয়েশ করে খুলে বসল গল্পের মহড়া। বরিশালের মুলাদীর কোনো এক হিন্দু জমিদার। যুদ্ধের সময় চলে গেল ইন্ডিয়ায়। কিন্তু তার জমিদারী তো পড়ে রইল মায়ের ভোগে। অযত্ন অবহেলায় তার বিরাট জমিদারবাড়ি দিনে দিনে হয়ে উঠল জঙ্গল। সেখানে আস্তানা গাড়ল যত হারামীর দল। মেয়ে ধরে এনে নানা নষ্টামির কেচ্ছা রটতে লাগল এলাকায়। তখন এগিয়ে এলেন এক হাজী সাব…

গল্প এগুতে থাকে। মুলাদীর গল্প শেষ করে মুরুব্বি আমাদের আবার নিয়ে যান চাঁদপুর। এক পারিবারিক গল্পে জমে ওঠে দুপুরের তাজা রোদ। আমি খুব আপন স্বরে গল্পের মাঝে মাঝে প্রশ্ন হাঁকাই। মুরুব্বি কায়দা করে জবাব দেন। গল্প তাতে আরও আঠালো হয়।

একসময় আত্মতৃপ্তি নিয়ে গল্প শেষ করেন কথক। আমাদের তেমন ভাবান্তর ঘটে না। তবু গল্পের একটা মহত্ব আমাদের পরিশ্রান্ত করে তোলে। একজন শ্রোতা একটা বিড়ি চান গল্পকথক মুরুব্বির কাছে। মুরুব্বি বেজায় বিব্রত হন, ‘হুজুর বয়া রইছে এইনে, এইনে বিড়ি ধরান যায় নাকি?‘

আমি বিড়ি সেবনে উৎসাহ দেই, ‘আরে ধরান ধরান, সমস্যা নাই…

মুরুব্বি বিড়ি ধরিয়ে সবার সঙ্গে শেয়ার করেন আগুন। আমি ৮ টাকা চায়ের বিল দিয়ে নগরীর রাস্তার দিকে পা বাড়াই। রূপকথা বলা মানুষেরা পিছিয়ে পড়ে। আমি অনেক এগিয়ে যাই—নগরীর দিকে, সভ্যতার দিকে…