কাবুল শহরের মাঝ দিয়ে একটা নদী বয়ে গেছে। নদীটার নাম পাগমান নদী। এই নদীর উপর একটি ব্রিজ, ব্রিজের নাম পুল-এ-সুখতা। বাংলায় অর্থ দাঁড়ায় আনন্দের সেতু। যুদ্ধ-বিগ্রহের আগে একসময় হয়তো এ সেতুটি মানুষের বিনোদনের স্থান ছিল। কিন্তু বিগন্ত বছরগুলোতে এই আনন্দ সেতু হয়ে উঠেছিল কাবুলের একদল মানুষের নিষিদ্ধ আনন্দের স্থান।

এই পুল-এ-সুখতার নিচে রমরমা হয়ে উঠেছিল মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য। আ/ফগানিস্তা*নে বিগত দশকগুলোতে আফিমের লাগামছাড়া উৎপাদন ও আফিমজাত মাদকপণ্য কোকেন, হেরোইন সহজলভ্য হওয়ায় পুরো দেশজুড়ে মাদকসেবন এক মহামারীতে রূপ নেয়। তাছাড়া যুদ্ধ, অর্থনৈতিক দুর্দশা, বেকারত্ব, হতাশা এসব কারণেও মাদকসেবন ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আকারে। আর এই পুল-এ-সুখতা ছিল সেই মাদক কেনা-বেচা, মাদকগ্রহণ ও মাদকসেবীদের অর্ধমৃত হয়ে পড়ে থাকার নিরাপদ অভয়াশ্রয়। রাত-দিন শয়ে শয়ে মাদকসেবী এখানে মাদক গ্রহণ করে নিথর পড়ে থাকত।

তালেবরা ক্ষমতায় আসার পর আফিম উৎপাদন ও মাদকের ব্যবহারে কঠোর টলারেন্স গ্রহণ করে। একই সঙ্গে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের ধরে ধরে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠাতে শুরু করে। কিন্তু মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া এই মাদকাসক্তি থেকে আ*ফগানদের মুক্ত করা কি সহজ হবে তালেবদের জন্য?

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কাবুল মিউনিসিপ্যালিটি (পৌরসভা) এক অভিনব বইমেলার আয়োজন করে পুল-এ-সুখতার উপরে। গত জানুয়ারি মাসে কাবুল পৌরসভা কর্তৃক এই সেতুর নিচ থেকে সকল মাদকসেবীকে উদ্ধার করে তাদের পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠানো হয় এবং সেতুর নিচে ও উপরে ফুলগাছ রোপণ, কেয়ারি ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে এর সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়। মাদকসেবনের অভয়ারণ্য যেন পরিণত হয়েছে সত্যিকারের পুল-এ-সুখতা—আনন্দের সেতুতে। আনন্দ সেতুর উপরে আয়োজিত বইমেলা সেই আনন্দের বার্তাই দিচ্ছে।

বইমেলা উদ্বোধন করতে এসে কাবুল পুলিশের মুখপাত্র খালিদ জাদরান চমৎকার বলেছেন, `Today I am praying that instead of life ending, clean water will flow under this bridge.’

`আজ আমি প্রার্থনা করছি, এই সেতুর নিচে জীবন নিভে যাওয়ার পরিবর্তে এখানে এখন প্রবাহিত হবে বিশুদ্ধ জল।’