অর্থ-সম্পদ নেই, রিক্ত, শূন্য—এমন মেয়ের পাশে দাঁড়ানোর মানুষের অভাব হয় না এ সমাজে। কিন্তু অর্থ-সম্পদ নেই, রিক্ত, ভেঙ্গে পড়া একজন পুরুষের দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। এটাই বাস্তবতা। পুরুষমাত্রই তাকে বার বার ভেঙ্গে পড়ার পরও দৃঢ় পায়ে উঠে দাঁড়াতে হয়। পুরুষের পা নড়বড়ে হলে চলে না। তার জীবন এবং পকেট—দুই জায়গাতেই অর্থ থাকতে হয়।

আমাদের এলাকায় একটা প্রবাদ আছে—গোস্ত ছাড়া হাড্ডি কুত্তায়ও চাটে না!

আমাকে তিনটা দারুণ উপদেশ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি জনাব গোলাম মওলা রনি। তার তোপখানা রোডের অফিসে বসে তিনি বলেছিলেন, জীবনে তিনটা জিনিস অবশ্যই অর্জন করবেন:

এক. স্বচ্ছলভাবে চলার মতো টাকা উপার্জন করতে হবে। টাকা ছাড়া রাষ্ট্র, সমাজ, এমনকি আপনি পরিবারেও সম্মান পাবেন না। আপনার নিজের কাছেই আপনি ছোট হয়ে যাবেন। আপনি কখনো উঁচু গলায় কথা বলতে পারবেন না। মানুষের কাছে আপনার মূল্যায়ন কমে যাবে। মা-বাবা বলেন কিংবা ঘরের বউ, এমনকি আপনি আপনার সন্তানের কাছেও নীচু হয়ে যাবেন। আপনি হুজুর হন বা সরকারি কর্মকর্তা, টাকা ছাড়া ভালোবাসাও অর্থহীন হয়ে যায়।

আপনি তো লেখক মানুষ (আমাকে উদ্দেশ্য করে), পকেটে টাকা না থাকলে দেখবেন আপনার লেখাও আসবে না। টাকা না থাকলে সৃষ্টিশীলতা মরে যায়। অনেক লেখক, কবি, শিল্পী, আর্টিস্ট শুধুমাত্র অর্থের অভাবে তাদের সৃষ্টিশীলতা বিসর্জন দিয়েছে।

দুই. আপনাকে যারা খুশি রাখে, তাদেরকে খুশি রাখুন, আনন্দে রাখুন। আপনার মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন—এরাই আপনার খুশির কারণ। এদেরকে সবসময় খুশি রাখুন, আপনার জীবনে খুশি-আনন্দের কমতি হবে না।

তিন. নিজের সুস্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখবেন। স্বাস্থ্য যদি ভালো না থাকে তবে আপনি কিছুই করতে পারবেন না। না আপনার নিজের জন্য, না পরিবারের জন্য, অথবা সমাজ বা মানবতার জন্য। সকল কিছুর মূলে সুস্বাস্থ্য। পিউর খান, বদ-অভ্যাস পরিত্যাগ করুন, সঠিক সময়ে ঘুমান এব পর্যাপ্ত ঘুমান, এক্সারসাইজ করুন, রোগ হলে ডাক্তারের কাছে যান, নিজেকে সবসময় ফিট রাখুন। আপনার ওপর ডিপেন্ড করছে আপনার ভালো থাকার সকল উৎস।

এর সঙ্গে আমি আরেকটা ধারা যোগ করছি:

চার. জীবনে ‘না’ বলতে শিখুন। আমি অনেক মানুষকে দেখেছি এবং আমি নিজেও জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, ‘না’ বলতে না পারার কারণে জীবনে অনেকভাবে ঠকতে হয়। আপনার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনদের সকল আবদার রক্ষা করতে হবে, এমন কোনো বাধ্য-বাধকতা রাখবেন না। আপনার জন্য যেটা পসিবল, আপনার সামর্থ্যের মধ্যে করা সম্ভব, আপনি সেটাই করুন। নিজের ক্ষতি করে, নিজের প্রয়োজনের চেয়ে অন্যের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়া বা নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে অন্যের জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিভোর হওয়া ছেড়ে দিন।

সবাইকে খুশি করার চেষ্টা করবেন না। এই দুনিয়ায় সবাইকে খুশি করতে পারে কেবল শয়তান। আপনার পক্ষে সবাইকে খুশি রাখা সম্ভব না। নিজের চরকায় তেল দিন। যখন আপনার চরকা ঠিকঠাক মতো চলবে তখন সেই চরকা দিয়ে যত জনকে সম্ভব উপকার করুন।

‘না’ বলা শিখতে হবে এবং সেটা প্রয়োগের ক্ষেত্রে নির্দয় হতে হবে।