শুরুতে একটা গল্প বলা যাক। পাখিদের গল্প।

ইরানের নিশাপুরের এক নিভৃত বন। বনে হাজারো পাখির সমাবেশ। সারাদিন নানা জায়গা পরিভ্রমণ করে সন্ধ্যেবেলা পাখিরা এ নিভৃত অরণ্যে নিজ নিজ ডেরায় এসে রাতযাপন করে। ভোর হলে আবার চলে যায় আহারের তালাশে। এখানে সেখানে উড়াউড়ি। খুঁটে খাওয়া নিত্যদিনের যাপিত জীবন। আবার সন্ধ্যা হলে ফিরে আসা অরণ্যের খড়কুটো বিছানায়।

এমনই চলছিল তাদের দিনকাল। কোনো ব্যাত্যয় নেই। কোনো উত্তেজনা নেই। একদিন রাতে সব পাখি ঘুমিয়ে ছিল যে যার বাসায়। হঠাৎই তারা দেখল, আকাশ চমকিত করে উড়ে যাচ্ছে এক অতিকায় চকমকি পাখি। যেমন তার ডানা আর গায়ের রঙ, তেমনি তার উড়ানে ছান্দসিক নৃত্যের হিল্লোল। এ যেন কোনো পাখি নয়, হাওয়ার পাখনায় ভর করা কোনো হীরকদ্যুতি। অরণ্যের পাখিরা নিজেদের অস্তিত্ব ভুলে অবাক তাকিয়ে রইল এই বাহারি ডানার পাখির দিকে। আহা! কী সুন্দর, কী সৌন্দর্য!

সবার চোখে চমক লাগতে লাগতে উধাও হয়ে গেল অনিন্দ্য সুন্দর সেই পাখি। কোথায় গেল? কোন আকাশ দিয়ে উড়ল দিল – পাখিরা আর হদিশ করতে পারল না। তাদের চোখের সামনে দিয়ে যেন ভোজবাজির মতো উধাও হয়ে গেল স্বপ্নরঙিন সেই পাখি।

কিন্তু উধাও হওয়ার আগে সেই পাখিটার একখানা রঙিন পালক ঝরে পড়ল বনের মধ্যে একটা খোলা প্রান্তরে। সকল পাখি পঙ্গপালের মতো ছুটে এল সেই পালক দেখতে। ঘাসের উপর ঝিকমিক করছে উড়াল-ডানার পালক। সবার চোখ কপালে উঠে গেলএ যে রূপকথার সি-মোরগের পালক! হাজার জীবনের সৌভাগ্যে কেবল সি-মোরগের দর্শন মেলে। সেই সি-মোরগ এসেছিল তাদের অরণ্য-আকাশে!

সকল পাখি সমবেত। সবাই সি-মোরগ নিয়ে কথা বলতে লাগল। হা-হুতাশ করে উঠল অনেকেই। সি-মোরগের ঝরা পালক দেখে তাদের মনের মধ্যে হাহাকার বেজে উঠল ক্ষণে ক্ষণেঅনিন্দ্য সুন্দর কোনো সি-মোরগ যদি আমাদের রাজা হতো তাহলে আমাদের দেশ থেকে সকল অনাচার, অন্যায়, বিভেদ দূর হয়ে যেতো। আপামর সকল পাখি বলাবলি করতে লাগল, এমন সুন্দর ডানার পাখিই কেবল তাদের রাজা হতে পারে। তাদের জন্য এমনই একজন অতিকায় সুন্দর সি-মোরগ রাজা দরকার। এমন রাজা না থাকলে রাজ্য চলে না সহি তরিকায়। তারা শকুন, চিল, বাজ, ঈগল এমন বড় বড় পাখির কাছে একজন রাজা নির্বাচনের দাবি করতে লাগল।

এ সময় পাখিদের সমাবেশে এসে হাজির হল হুদহুদ পাখি। হুদহুদ অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী পাখি। ইতিহাস এবং রূপকথা সম্পর্কে তার জ্ঞান বিস্তর। রাজপরামর্শদাতা এবং রাজনীতির ব্যাপারেও তার জুড়ি নেই। এ কারণে সকলে তাকেই তাদের পরামর্শক নিযুক্ত করল রাজা নির্বাচনের ব্যাপারে। হুদহুদ তাদের দাবির প্রেক্ষিতে অনেকক্ষণ চিন্তা-ভাবনা করে জানাল, পাখিদের রাজা হিসেবে সি-মোরগই একক অধিকারী। রাজা হিসেবে সি-মোরগের সমকক্ষ কেউ নেই। কোনো সি-মোরগ আমাদের রাজা হলে আমাদের রাজ্য থেকে সকল অনাচার, খুন-খারাবি, অবিচার, হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে। কিন্তু সি-মোরগ তো সহজসাধ্য বিষয় নয়। সি-মোরগ থাকে এখান থেকে হাজার মাইল দূরে তুর্কিস্তানের কুহে কাফ অঞ্চলের দুর্লঙ্ঘ পাহাড়ি বনে। সেখানে যেতে হলে আমাদের পাড়ি দিতে হবে সাত সমুদ্দুর তের নদী। পথে পথে আছে নানা বিপদ ও জীবননাশের শঙ্কা। এসব পেরিয়ে যদি তোমরা সবাই যেতে পারো কুহে কাফে, তবেই সি-মোরগের সন্ধান পাবে। সন্ধান পেলে তবেই তাকে তমিজ করে বলা যাবে যে তাকে আমরা রাজা হিসেবে দেখতে চাই।

পাখিরা সমবেত কণ্ঠে বলে উঠল, যত কষ্টই হোক আমরা কুহে কাফের গহীন অরণ্যে যাব সি-মোরগের খোঁজে। আপনি যাত্রার পথ বাতলে দিন।

হুদহুদ সমবেত পাখিদের নিয়ে যাত্রা শুরু করল তুর্কিস্তানের কুহে কাফ অভিমুখে। সবার চোখে মুখে জ্বল জ্বল করছে আগ্রহ, দৃষ্টিতে নতুন কিছু সন্ধানের অবারিত তৃষ্ণা। রূপকথার সি-মোরগের সন্ধান পেতে ডানার ঝাপটায় পাড়ি দিতে লাগল মাইলকে মাইল।

কিন্তু পাখিরা যতটা সহজ মনে করেছিল, যাত্রা মোটেও তত সহজ হল না। যাত্রাপথে যেতে যেতে কোনো পাখি ক্লান্তিতে পিছিয়ে পড়ল, কেউ মারা পড়ল শিকারীর হাতে, কেউ সবুজ বনানী দেখে আর সামনে এগুতে চাইল না, কেউ উপাদেয় খাবারের সন্ধান পেয়ে পথিমধ্যে থেমে গেল, কেউ অহেতুক এই মিছে মায়ার পেছনে ছোটাকে নিরর্থক মনে করে যাত্রাভঙ্গ করল। বহু দূরের পথ, তবু যেতে হবে অক্লান্ত।

এভাবে দিনের পর দিন পাখিদের যাত্রা অব্যাহত রইল কুহে কাফের সি-মোরগের সন্ধানে আর ধীরে ধীরে প্রতিদিন কমতে লাগল পাখিদের সংখ্যা। দীর্ঘ যাত্রার কষ্টকর ক্লেশ সইতে না পেরে অধিকাংশ পাখিই দলছুট হয়ে গেল পথিমধ্যে। হুদহুদের নেতৃত্বে অল্পসংখ্যক পাখিই রইল কেবল অভিষ্ট লক্ষ্যের পানে অবিচল।

অবশেষে পাখিদের এই ছোট্ট মিছিল একদিন ঠিকই পৌঁছে গেল কুহে কাফের সেই মায়াবী অরণ্যে। যাত্রা শুরু করেছিল লাখো পাখির বিরাট এক দল, সেখানে পৌঁছে তারা দেখল, তাদের সঙ্গে আছে মাত্র ত্রিশটি পাখি। নিশাপুর থেকে লাখো পাখির মিছিল কুহে কাফে এসে পরিণত হয়েছে মাত্র ত্রিশজনের ছোট্ট দলে। তারা পাড়ি দিয়ে এসেছে শত শহর, অজস্র জনপদ। অসংখ্য বনানী পেছনে ফেলে এসেছে। তরিয়ে এসেছে সকল লোভ, হিংসা, অহংকার, প্রলোভন, ক্ষুধা, তৃষ্ণাসকল পিছুটান। উদ্দিষ্ট লক্ষ্য থেকে এই ত্রিশজন একবারও পেছনে তাকায়নি। অবশেষে কুহে কাফ।

তারা সবাই ক্লান্ত, শ্রান্তিতে একেকজন মৃতপ্রায়, তৃষ্ণায় ফেটে যেতে চাচ্ছে বুকের ছাতি। কুহে কাফের ঘন অরণ্যের মাঝে ছোট্ট একটি টলটলে হ্রদ। হ্রদের স্বচ্ছ স্ফটিক জল যেন অপার হয়ে ডাকছে তাদের। তারা তৃষ্ণা মেটাতে ছুটে গেল হ্রদের দিকে।

হ্রদের জলে ঠোঁট ডুবিয়ে যখনই তারা জলপান করতে উদ্যত হল, স্বচ্ছ জলে নিজেদের অবয়ব দেখে বিষম খেল সবাই। এ কি! জলের আয়নায় কাকে দেখছে তারা? এ যে জলজ্যান্ত সি-মোরগের অবয়ব ভেসে উঠেছে জলদর্পণে। এ কিভাবে সম্ভব! পাখিরা এবার নিজেদের দিকে তাকাল। সত্যিই তো, তারা নিজেরাই তো রূপকথার সি-মোরগ হয়ে গেছে। তাদের পুরোনো ডানার বদলে শোভা পাচ্ছে রঙিন মখমল পাখনা, মাথার ঝুঁটিতে গর্বিত উড্ডীন পালক, গলায় তেজোদীপ্ত সারগামের আওয়াজ। প্রতিটি পাখি পরিণত হয়েছে একেকটি রূপময় সি-মোরগে।

পাখিরা নিজেদের এই পরিবর্তন দেখে বুঝল, সি-মোরগ আসলে রূপকথার কোনো পাখি নয়। সে এই পৃথিবীরই সাধারণ পাখি। প্রত্যেকটা সাধারণ পাখি যখন দুর্লঙ্ঘ সাধনা, আত্মত্যাগ, পার্থিব মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে নিজের উদ্দিষ্ট লক্ষ্যের পানে অবিচল যাত্রা করতে পারে, তখন সে নিজেই একজন সি-মোরগে পরিণত হয়। সাধারণ একজন থেকে হয়ে ওঠে অসাধারণ। পার্থিব সকল জঞ্জালের ভেতর থেকেও উড্ডয়ন করে আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য জগতে। পরিণত হয় রূপকথায়।

ইউরোপের ফিনিক্স পাখি নিশাপুরে এসে হয়ে যায় কুহে কাফের সি-মোরগ।

দুই

এই গল্প নিশাপুরের বিখ্যাত সুফিকবি ফরিদুদ্দিন আত্তার রহ.-এর ‘মানতিকুত তায়্যার’ কাব্যগ্রন্থের সংক্ষিপ্তসার। খোরাসানি এই কবি জন্মগ্রহণ করেন ১১৪৫ খ্রিষ্টাব্দে। পৈতৃকভাবে ছিল ওষুধ ও সুগন্ধির ব্যবসা, এ কারণে নামের শেষে যোগ হয়ে যায় ‘আত্তার’ উপাধি। যারা সুগন্ধি ও ভেষজ ওষুধ তৈরি করে থাকে আরবিতে তাদের আত্তার বলা হয়। ইংরেজিতে বলা যায় ফার্মাসিস্ট। তিনি নিজেও সুগন্ধি ব্যবসায়ী ছিলেন।

‘ফার্মাসিস্ট’ শব্দটি যেহেতু আলোচনায় এসেই গেল, তাহলে ব্রাজিলিয়ান বিখ্যাত লেখক পাওলো কোয়েলহোর বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য অ্যালকেমিস্ট’ বিষয়ে কিছু জ্ঞাতব্য বাতচিত করে রাখা প্রয়োজন। দ্য অ্যালকেমিস্ট উপন্যাসটি যারা পড়েছেন তারা হয়তো উপরোল্লিখিত গল্পের সঙ্গে উপন্যাসের প্রধান চরিত্র সান্তিয়াগোর খানিকটা মিল খুঁজে পাবেন। তরুণ সান্তিয়াগো গুপ্তধনের সন্ধানে সুদূর আন্দালুস (স্পেন) থেকে সাগর মরু ঝঞ্ঝা পাড়ি দিয়ে একসময় এসে পৌঁছায় প্রাচীন মিশরীয় পিরামিডের কাছে। তবে এই দীর্ঘ যাত্রায় নানা মুণিঋষির সান্নিধ্যে এসে তার লব্ধ হয় পরমাত্মার সঙ্গে যোগাযোগের এক নিপুণ সংযোগ। সে গুপ্তধন খুঁজে পায় ঠিকই, কিন্তু হিরে-জহরতের মূল্যবান পরমবস্তু খুঁজতে খুঁজতে নিজের ভেতরে আবিষ্কার করে অমূল্য এক পরমাত্মার। সেই পরমাত্মার সন্ধান তাকে জগতের সবকিছু তুচ্ছ করে ঊর্ধ্বলোকের পথ দেখায়। যার স্পর্শে সে নিজেই তৈয়ার হয় একজন অলৌকিক শক্তিধারী আধ্যাত্মিক পুরুষে।

অনেক সমালোচক বলে থাকেন, পাওলো কোয়েলহো মূলত ফরিদুদ্দিন আত্তারের মানতিকুত তায়্যার কাব্য দ্বারা প্রভাবিত। এমনটি বলা যে দোষণীয় নয়, তার যথেষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে কোয়েলহোর ব্যক্তিজীবন অথবা তাঁর অন্যান্য আরও কিছু উপন্যাস পাঠ করলে। ব্যক্তিজীবনে কোয়েলহো সুফিতাত্ত্বিক ঘরানার লোক। তার একাধিক উপন্যাসে তিনি সে স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর আলেফ, বাই দ্য রিভার পিদরা আই সেট ডাউন এন্ড উইপ্ট, দ্য জহির…ইত্যাদি উপন্যাসে তিনি সীমিত পরিমাণে আধ্যাত্মিক উপাদান তথা সুফি চিজ ও আসবাব যোগাড় করেছেন। এবং এসব উপন্যাসে সুফিতত্ত্বের যে ধারা তিনি ব্যবহার করেছেন, তার অধিকাংশই ইসলামি সুফিতত্ত্বের আদল থেকে উদ্গত। আত্তার, রুমি, হাল্লাজীয় সুফিতত্ত্বের নিগূঢ় তাত্ত্বিক অর্থকে তিনি উপন্যাসের গণ্ডিতে আবদ্ধ করেছেন।

সে যাই হোক। এখন কথা হলো, আত্তার যেভাবে পাখিদের সি-মোরগ হওয়ার তালিম দিলেন, সেই তালিম কিন্তু একটা উপমা মাত্র। এই উপমার মাধ্যমে তিনি মূলত মানুষের আত্মিক অপরিমেয় শক্তির আধারকে আত্মতালাশের আলোয় নিয়ে এসেছেন। তিনি বয়ান করতে চেয়েছেন, সকল মানুষই আত্মার ধারক। কিন্তু খুব অল্প কিছু লোক সেই আত্মার সন্ধান পায়। আত্মার সন্ধান পেতে হলে পাড়ি দিতে হবে দৈহিক ও মানসিক দুর্লঙ্ঘ সাধনা। নিজের ভেতর থেকে স্পর্শ করতে হবে অস্পৃশ্য আরেক ‘আমি’কে। যে ‘আমি’ দেহ কিংবা হৃদয় নয়, ক্রীতদাস কেবল নিভৃতে থাকা আপন আত্মার।

বস্তুত, সহজ দৃষ্টিতে আমরা বস্তুজগতের ক্রীতদাস। বস্তুর প্রতিই আমাদের অমোঘ আকর্ষণ। শরীর খাবার চায় তাই আহার করি, শরীর ক্লান্ত হলে নরম বিছানায় ঘুমানোর আকাক্সক্ষা করি, বিনোদনের জন্য নানা উপাদান বাছাই করি, যৌনতার জন্য পেলব শরীর কামনা করি…এ সবই কিন্তু বস্তু, যা শরীর ও হৃদয় কামনা করে। কিন্তু আত্মা কী চায়? হৃদয় শরীরের অনুগত, কিংবা শরীর হৃদয়ের অনুগত। আত্মা কিন্তু দেহের জামিনদার নয়। শরীরের প্রতি আত্মার কোনো আনুগত্য নেই। হৃদয়ের প্রতিও তার কোনো অনুরাগ নেই। তার অনুরাগ দেহজ এবং মনোজাগতিক কামনার ঊর্ধ্বে। সে মহত কিছু কামনা করে। খাঁচার ভেতর অচিন পাখি বলে লালন যে আহাজারি করেছেন, আত্মা সেই অচিন পাখি। বাংলার লালন আর খোরাসানের আত্তার একই পথের যাত্রী, গন্তব্য এক। দুজনের পথের শুরুটা কেবল ভিন্ন।

আমাদের অঢেল টাকা আছে, বিত্ত আছে, সুখ কেনার সরঞ্জামের অভাব নেই। তবুও কি আমরা সুখে ঘুমোতে যাই? হাহাকার থাকে না হৃদয় অতলে? মানুষের ভিড়ে কি নিজেকে একাকী মনে হয় না? হয় তো! আমরা জগতের রঙচঙে পার্থিব কোলাজের ভেতর চাপা পড়ে হাঁসফাস করিকোথায়, কোথায়…! কী যে আমরা খুঁজে বেড়াই, সেই কী জিনিসটাই খুঁজে পাই না। কেবল একটা অমর অন্ধকারের ডাক শুনি। কোথাও নিরুদ্দেশ হতে চাই। হৃদয় চায় হৈ হুল্লোড়, উদ্দাম, উদ্বেল, শীৎকার আর নানা লোকজ ধ্বনি। কিন্তু সবকিছু থেমে গেলে মনে হয়, আমি তো ভিন্ন কিছু চেয়েছিলাম। এই ডাকটাই আত্মার ডাক। সবকিছু ছিন্ন করার প্রহেলিকা গুপ্ত থাকে ওখানেই।

আমরা মনে করি, আত্মিক সাধনা করতে হলে জগৎ সংসার ছেড়েছুড়ে বনবাসে গিয়ে বিরাট বিষম ধ্যানে মগ্ন হতে হয়। এটা সত্য, আত্মার সংযোগ নিভৃতি চায়। তবে এর জন্য সুন্দরবন দরকার হয় না। জগতের সাংসারিক ভিড়ের মাঝেও নিজেকে আত্মার করকমলে পেশ করা যায়। আত্মার বাস যেমন গোপন, তেমনি তার সাধনাও একাকী। পাখিদের কুহে কাফ ভ্রমণের প্রবল ইচ্ছাই তাদের সকল নাগপাশ থেকে মুক্ত করেছিল। আমাদের জাগতিক কুহেলি মায়ার ঊর্ধ্বে পরিভ্রমণের জন্য প্রয়োজন সেই প্রবল ইচ্ছাশক্তি। বস্তুর প্রতি অদম্য ভালোবাসা হেয় করে একক পরমাত্মার প্রতি অমোঘ আনুগত্যই কেবল আত্মার বহুধা একাকিত্বকে অবিনশ্বর করতে পারে। বাদবাকি যা আছে, সকলই কেবল কথার কথা!

ফরিদুদ্দিন আত্তার রহ. আমাদের সেই ভ্রমণের সবকই শিখিয়েছেন তাঁর মানতিকুত তায়্যার কবিতার মাধ্যমে।


মাসিক নবধ্বনি অক্টোবর ২০১৮ সংখ্যার সৌজন্যে