ইবরাহিম বললেন—
আমার আওয়াজ ক্ষীণ, শরীর শীর্ণ
সময়ের দারুণ ঝঞ্ঝায় ক্ষয়ে গেছে নিঃশ্বাসের বৈভব
কেনান আর হেবরনের ধুলোয় লুটিয়ে গেছে যৌবনের অরুণাভ সুখ
জিবরাইল বললেন— আপনি ডাকুন!
ডাকুন আপনার প্রভুর নামে, যিনি আপনাকে দান করেছেন ইসমাইল
এবং বলুন— হে লোকসকল মহাবিশ্বের!
সাড়া দাও, সাড়া দাও আসমানি দাওয়াতে
এইটুকুই, আওয়াজ পৌঁছে যাবে অনাগত সকল প্রাণে
বস্তুত আপনার রব আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির

ইবরাহিম দাঁড়ালেন মাকাম পাথরে
অস্বচ্ছ পরম দৃষ্টিতে তাকালেন ইয়েমেনি আকাশে
আর উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করলেন—
লোকসকল, এইখানে এক পুরনো পাথরগৃহে
পরমাত্মা বিছিয়ে রেখেছেন মেহমানি দস্তরখান
তোমাদের দাওয়াত, এসো এক অধীর আহ্বানে
এই তোমাদের হজ্জ, এসো এ রোদ্রতপ্ত মক্কাভূমিতে

ইবরাহিম!
হাত রাখো আমার আত্মার গিলাফে
আমার বুকের জিকিরগাহে কান পাতো নিরালায়
শুনতে পাও, শুনতে পাও আমার লাব্বায়িক ধ্বনি?
আরও গভীরে, স্পর্শ করো আমার হৃৎপিণ্ডের তরল শোনিত
দেখো, রক্তের কাফেলা সফেদ ইহরাম বেঁধে কাতারবন্দি
সমগ্র সত্তায় ছুটোছুটি করছে কাবার বোরাক
কখন, কখন নয়নের জলে ভেসে যাবে স্বর্গীয় কৃষ্ণপাথর

ইবরাহিম!
আমাকে চিনতে পারছো পিতা আমার?
চার হাজার বছর আগে, স্মরণ করো সে সময়ের কথা
যখন তুমি আমার দিকে ফিরে উচ্চারণ করেছিলে—
ইয়া আইয়ুহান্নাস! কুতিবা আলায়কুমুল হজ্জ
ইলাল বায়তিল আতিক, ফাআজিবু রব্বাকুম
আর তখনই আরশে আজিম, লওহে কলম, আলমে আরওয়াহ
ছেয়ে গেলো লাব্বায়িক লাব্বায়িক হাজিরায়
অযুত রুহের স্বীকারোক্তি—
আমরা আসছি, আসবোই—তৈরি থেকো অনাগত পৃথিবীর ধুলোর নগরী

ইবরাহিম—
আমার শিরদাঁড়ায় হাত রাখো বৃদ্ধ জনক
আমি ছিলাম সেখানে, আমায় চিনতে পারছো কাবার প্রকৌশলী?
আমার কপালে ছুঁয়াও তোমার আঙুলের রেখাছাপ
এঁকে দাও তাওয়াফের নুরানি সিলমোহর
রবের দস্তরখানে একটু জায়গা খালি করে দাও
বসে যাবে মুসাফির মাতাফের থামের আড়ালে
বহু জরায় ক্লান্ত প্রাণ এক, ঘুমিয়ে পড়বে মুজদালিফার খেজুরবাগানে

একবার ডেকে নাও হে আমার আসমানি জন্মজনক
কাবার গিলাফের মখমল অন্ধকার রোশনিতে
ঘুমিয়ে পড়তে চাই শতাব্দী প্রতীক্ষায়—ভাই ইসমাইলের সঙ্গে


[ এ পোয়েট্রি ফ্রম আপকামিং বুক ‘সুফিয়ানা : জার্নি টু ইনফিনিটি ]