বহুদিন হয়ে গেলো, আমি কোনো প্রেমিকের কান্না শুনি না। একটা সোমত্ত ছেলে চোখ লুকিয়ে কাঁদছে, চোখের জলে তার গাল ভিজে যাচ্ছে, গাল বেয়ে জামার কলারে, কলার থেকে জলের ধারা গড়িয়ে নামছে বুকপকেটে; আমি এমন কান্না বহুদিন হলো দেখি না। কয়েকদিন ধরে এমন কান্না দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে, জানেন! কী অদ্ভুত আমরা!

আমার দেখার শক্তি কমে যাচ্ছে দিন দিন। সন্ধ্যায় জানালার পাশে শিস দেয়া কিশোর, নদীর পাড়ে বসে থাকা ধ্যানী যুবক, হাসপাতালের বারান্দায় শুয়ে থাকা সন্তানসম্ভবা নারীর স্বামী; এসব আমার চোখ ফসকে বেরিয়ে যায়। খুব ঘটা করে কান্নামোহন কোনো প্রেমিককে দেখি না গাছের আবডালে মুছে ফেলছে প্রাক্তন প্রেমের সমস্ত চ্যাট হিস্ট্রি।

অথচ একদা এক প্রেমিকাকে দেখেছিলাম—ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছিলো প্রস্ফুটোন্মুখ জলজ বয়সে। ষোলো দিন পর সে ফিরে এসেছিলো কাঁদতে কাঁদতে। তার বাড়ির লোকজন তাকে দেখেছিলো অকস্মাৎ বমি করতে, ফিট হয়ে পড়ে যেতে, চোখে-মুখে ফুটে ওঠেছিলো ভয়ার্ত স্বর্গীয় সৌন্দর্য। কিন্তু অমন সৌন্দর্য মানায়নি তাকে একটুও। একটা ফুল, একটা ফড়িং, একটা দাঁড়কাক, ঘরের বেড়ায় গোঁজা কাঁকই, বাড়িতে পোষা দুধেল গাই কিংবা একটা মানুষও একটিবারের জন্য তাকে বলেনি—দীঘির জলে কার ছায়া গো!

সৌন্দর্যের অমন বরাভরণ সবাইকে মানায় না। সপ্তাহান্তে প্রেমিকাটি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলো।

সেই প্রথম আমি জেনেছিলাম—মর্গে থেকে লাশ এলে, মাথার খুলি থেকে তলপেটের নিটোল পর্যন্ত থাকে ফালি করে কাটা। আমি তখন কেবলই হেফজখানায় পড়ি। কী অনন্ত কৌতূহল নিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম মর্গফেরত প্রেমিকাকে! ফর্সা দুধেআলতা গায়ের রঙ, কপালের মাঝ বরাবর কাটা-সেলাই, চোখবন্ধ নিঃসীম নিদ্রা। এমন সৌন্দর্যের মৃতমুখ কখনো দেখিনি আর! এই স্মৃতি আমি আমার প্রেমিকাকে কোনোদিন বলতে পারিনি।

জানেন, প্রেমিকেরা গড়পড়তা কী নিয়ে কাঁদছে আজকাল? কাঁদে? নাকি, প্রেমিকেরা কাঁদে না কখনো? কান্নার সৌন্দর্যের সকল দায়ভার শুধু প্রেমিকাদের একার একার?