শামছুন্নাহারের সন্তান জন্মেছে আদমের ঔরসে
হাওয়ার গর্ভ থেকে উৎসারিত রক্ত-ভ্রুণ মেখে 
ছিটকে বেরিয়ে এসেছে পৃথিবীর মৃত্তিকা জলোচ্ছ্বাসে
কে তাকে রুখবে? কে তাকে রুখবে মাটির বুকে পা ফেলে দাঁড়াবার?
কার হাত তার পায়ে পরিয়ে শেকল, নিয়ে যায় নাফ নদীর বধ্যভূমিতে?

কোন শয়তান ঈশ্বরের মাটির মানচিত্রে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে
রাষ্ট্রসংঘের অধিবেশনে গিয়ে গায় দেশাত্মবোধক গান?

আগুন মেখে ফনিক্স পাখির মতো শামছুন্নাহার
ভস্মভূমির ছাই থেকে জন্ম দিয়েছে যে শিশুর
সে একদিন ঝলমলে সূর্যদিনে উড়াবে বিরাট এক পতাকা
তার জন্য, ভোর আনতে গেছে শামছুন্নাহার

শামছুন্নাহার তার সন্তানের জন্য ভোর আনতে গেছে, যুধিষ্ঠির

সে আসার আগেই-
ধর্ম দিয়ে বেঁধে ফেলো সদ্যোজাত সন্তানের নাড়ি
ঈশ্বরের নামে খঞ্জর দিয়ে মানচিত্রে আঁকো রক্তের সীমানা
প্রতিটি বর্ণের চামড়ার নিচে সেলাই করে দাও ভিন্ন ভিন্ন পাসপোর্ট
ভাষার মুখ বেয়নেটবিদ্ধ করে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারো প্রত্যেক আদিবাসীকে
ধর্ষণ করে লাশ ফেলে দাও ক্ষেতের কিনারে, যে নারী এখনও দাবি করে
এই শষ্যের বীজ থেকে হাজার বছর আগে জন্মেছিলো তার পূর্বপুরুষ

বোধিসত্ত্বের শরণ নিয়ে চিৎকার করেনি যে শিশু
স্রোতাপত্তি লাভের অভীপ্সাহীন এখনও চঞ্চল যে কিশোরী
নির্বাণের দীক্ষালাভে তপস্যা করেনি যে যুবক
তাদের হত্যা করো, খুন করে লাশ পুড়িয়ে ফেলো নিকানো উঠোনে
ত্রিশরণ মন্ত্র জড়িয়ে ছুরির ফলায়, বিচ্ছিন্ন করো ধর থেকে মাথা
চকচকে দায়ের কোপে বুকে পিঠে এঁকে দাও ফালি ফালি করা ধর্মচক্র
ধর্ষিত জরায়ুর উদ্গীরিত রক্তের ফোয়ারায় ভরে নাও ভিক্ষাবাটি
শামছুন্নাহারের রক্ত বলিদানে স্নাত হও, পুণ্য হও সুজাতার প্রেমিক

পৃথিবীর প্রতিটি উপাসনালয় থেকে তুলে আনবো স্তবকপূত পবিত্র পেয়ালা
শামছুন্নাহারের জরায়ু পবিত্র করবো লুম্বিনি ঝর্ণার পুণ্যজলে

পৃথিবীর বাতাসে জন্ম নিয়েছি
আকাশের ঘ্রাণ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি ঘাসের আঁচলে
আধবেলা ঘুম থেকে জেগে দেখি, বৃক্ষ থেকে উড়ে গেছে ধুসর কবুতর
ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকানো হাবিয়া দোজখের গেরুয়া আগুন মিশে 
একাকার হয়ে গেছে ভিক্ষুর পরিধেয় ত্রি-চীবর হলুদ পোশাকে 
ফসলের ক্ষেত ভরে গেছে হলি গ্রেইল উপচানো থকথকে রক্তে
ঘরপোড়া গন্ধের নিচে চাপা পড়ে গেছে মানুষের হাড় ভাঙার শব্দ

মানুষ নয়, শামছুন্নাহারের বাড়ির চাতালে পুড়ে গেছে
যীশু, মুহাম্মদ, শিব, গৌতম বুদ্ধের অলৌকিক ঈশ্বরের ঠিকানা

আজ আমার কোনো দেশ নেই
প্রত্যেকটা পাখির দেশ আছে, প্রতিটি নদীর নাম আছে,
অরণ্যের পরিচয় আছে, প্রতিটি পোকার আছে নিজস্ব ঘর
আমার কোনো ঘর নেই শামছুন্নাহার

জরির ফিতায় বাঁধা শরণার্থী শিবিরের প্লাস্টিক ছাদের নিচে
আমার কোনো রাষ্ট্র নেই, রাষ্ট্রপতি নেই
ভুল বানানের কার্ড নেই, দপ্তরবিহীন মন্ত্রী নেই
রাস্তাঘাটে আমার নামে ফলক নেই, স্লোগানমুখর মিছিল নেই

শরণার্থী শিবিরের প্রতিটি বৃক্ষ আমার পিতা
নাফ নদীর প্রতিটি ঢেউ আমার মায়ের মতো
অনাগত আমার সকল অশ্রু আমার সন্তান, শামছুন্নাহার