কার কাছে রাখি গচ্ছিত বর 
আগুন আগুন এই অভিশাপ
এই অভিশাপ তোমার নামে পাঠিয়ে দিলাম

নষ্ট হলে সিংহাসনের খড়্গ-কৃপাণ
এই অভিশাপ ছড়িয়ে দিলাম
ধানের কাছে মাটির কাছে, সাঁঝ-বিকেলে
হাঁসের ডানায় তুলে দিলাম, রক্তকমল ঝোঁপের রঙে
এই অভিশাপ শিশুর কানে বলে গেলাম
নদীর স্রোতে পলিমাটি, উজান-ভাটির তাগড়া দেহে
ভাসিয়ে দিলাম এই শাপেরই ছাই ভস্ম

লাশের হাতে এই অভিশাপ দিয়ে গেলাম
এই অভিশাপ দিয়ে গেলাম দিনমজুরের নিলাম-হাটে,
যুবতী মায়ের গর্ভে আমি এই অভিশাপ মন্ত্র দিলাম
যন্ত্রকলের শক্তহাতে তুলছে যারা কষ্ট ডলার
তাদের বুকের নেমপ্লেটে এই অভিশাপ লিখে দিলাম,
কৃষক যখন তুলবে ফসল, শস্যদানার ভরাট বুকে
এই অভিশাপ বজ্র হবে গোলায় গোলায়
এই অভিশাপ শহর-গ্রামের রাস্তা ঘুরে 
নাচবে প্রবল জিঘাংসাতে,
জায়নামাজের সটান বুকে, ভোর বিহানে
এই অভিশাপ হাঁকবে আজান
শঙ্খধ্বনির অন্ত্যমিলে এই অভিশাপ বিষ্ণু হবে

বুকপকেটে আগুন নিয়ে অহর্নিশে ঘুরছে যারা
তারা এখন কোথায় আছে কেমন আছে,
তারা এখন চতুর্দিকে পাতার কাছে পাতছে দু’হাত
আকাশ নীলে খাচ্ছে তারা এ্যালকোহলিক তিমির প্লাবন,
বুকের ভেতর শাবল-করাত-গাঁইতি দিয়ে 
ভাঙছে বুকের পথ-পরিখা, তারা এখন
জিবরাইলের ডানার খোঁজে কাঁপছে ভীষণ যুদ্ধখরায়,
দেখো তাদের চোখের নেশায় কেমন করে ফুঁসছে বারুদ
উড়ছে ঘৃণার উপচানো সুখ, মুখের ভেতর মত্ত শ্লোগান
তিরতিরিয়ে প্রতীক্ষমাণ, তারাই জানে…
তারাই জানে আগুনরাঙা এই অভিশাপ তাদের বুকেই মানায় দারুণ

এই অভিশাপ যাদের চোখে পড়বে তারা
মৃত্যুপাগল লকব নেবে
তারাই হবে মৃত্যু অমর
তারাই হবে ওই পতাকা
তাদের নামেই সৌধ হবে বাংলা মায়ের বুকটা জুড়ে
-আজকে যারা ‘মানুষ’ শেষে মানুষ হবে

এই অভিশাপ তোমার নামে পাঠিয়ে দিলাম


[ বুকপকেটে আগুন দিলাম : ‘ইয়া আফরোজা ইয়া আফরোজা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে ]