যদি আপনাকে প্রশ্ন করি, রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের জীবন থেকে আপনি কী শিক্ষা গ্রহণ করেছেন? আপনি কী উত্তর দেবেন? জানি, আপনি অনেক তত্ত্বীয় এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ কথাবার্তা বলবেন উত্তরে। হাদিস থেকে, কুরআন থেকে, অতীত ও বর্তমান পৃথিবীর ধর্মীয় ব্যক্তিদের উদাহরণীয় জীবন থেকে উদ্ধৃতি টানবেন। এসব সত্য, মেনে নিলাম। প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি রাসুলের জীবন থেকে কোন একটা আচার, অভ্যাস, কাজ, আদেশকে পুরোপুরি অনুসরণ করছেন?

রাসুলের সুন্নত অনেক। তার জীবনের পুরোটাই সোনায় মোড়ানো। এই সোনায় মোড়ানো জীবন থেকে একটা সুন্নতকে আপনি আঁকড়ে ধরুন। সামান্য একটা সুন্নত, যেমন ধরুন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম কখনো কারো সঙ্গে রেগে কথা বলতেন না। এই অভ্যাসটা আপনি সারা জীবনের জন্য নিজের আয়ত্ত করে নিন। বলে দিতে পারি, রাসুলের এই একটা অভ্যাসই আপনাকে সারা জীবনের জন্য বদলে দেবে।

রাসুল কখনো মিথ্যা বলতেন না। প্রতিজ্ঞা করুন, আর কিছু পারি বা না পারি, জীবনে কখনো মিথ্যা বলব না। রাসুল ঋণ করলে তা ফিরিয়ে দিতেন যত দ্রুত সম্ভব। এটাকে জীবনের আবশ্যিক কাজ ধরে নিন। কখনো কারো ঋণ অপরিশোধ রেখে স্বস্তির নিশ্বাস নেবেন না। রাসুল খাওয়ার আগে সবসময় হাত ধুয়ে খেতেন। আপনিও আগামী জীবনে সকল খাবারের আগে হাত ধুয়ে খাবার গ্রহণ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন। 

রাসুলের জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপ অনুসরণীয়। প্রত্যেকটা কাজ পৃথিবীর সকলের জন্য অনুসরণযোগ্য।

আমাদের জীবনের ব্যস্ততা অনেক। আমাদের অপারগতার শেষ নেই। অজুহাতের বিরাম নেই। সকল সুন্নতের অনুসরণ দুঃসাধ্য মনে হয়। তাহলে অন্তত একটা সুন্নতকে এমনভাবে ধরুন, যেভাবে মা তার সন্তানকে ঝড়ের রাত্রে বুকে আগলে রাখে। 

শত ব্যস্ততা হোক। লোকে যা বলার বলুক। জীবনে বাধার পাহাড় উল্লম্ফন করে দাঁড়াক সামনে। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ একটা সুন্নত কখনো নড়চড় হবে না। এই সুন্নতটা হবে জীবনের নোঙর।

প্রতিদিন পাঁচ টাকা করে দান। সামান্য। তবু অবিরত হোক আজীবন। নামাজের পর তিন তসবিহ। মাত্র দুই মিনিট। এ-ই আরাধ্য হোক জীবনের। মা-বাবার সঙ্গে হাসিমুখে সকল কথা বলা। যত রাগ করুন তারা। কষ্টে বুক ফেটে যাক। না, হাসিমুখ যেন মলিন না হয়। 

এই একটা সুন্নতই আপনার জীবনকে বদলে দেবে। সুশোভিত করবে কবর-অন্ধকারে পোকামাকড়ের ঘরবসতি। 


[ মাসিক নবধ্বনি সেপ্টেম্বর ২০১৮ সংখ্যা থেকে।  ]