ঠাণ্ডা চেহারার নুর নামের যে যুবকটিকে আপনারা প্রায়ই ঢাকা ভার্সিটির এখানে সেখানে মার খেতে দেখেন, কখনো সরকারের পেটুয়া বাহিনীর হাতে বা কখনো সরকারপোষ্য ছাত্রদের হাতে, মাঝে মাঝে ট্রল করেন যাকে নিয়ে, এই ভিপি নুরুল হক নুর এই জাতির একটা সিম্বল। সবদিক থেকেই তিনি সিম্বল হয়ে উঠছেন। একদিকে তাকে যেমন সত্য উচ্চারণ করতে দেয়া হয় না, আঘাত-ভয়-আদর-আশ্বাসে তাকে দমিয়ে রাখার কোশেশ যেমন অব্যাহত; অন্যদিকে সত্য উচ্চারণ করলেই তিনি নৃশংস আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশের আঠারো কোটি মানুষের প্রতিচ্ছবি আজ এর চেয়ে ভিন্ন নয়। পার্থক্য একটাই—ভিপি নুর বার বার আঘাতের পরও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্য উচ্চারণে কুণ্ঠিত হননি; পক্ষান্তরে আমরা শতমুখী বিপদের ভয়ে চুপসে আছি। এ কারণেই নুর আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সবচে শক্তিশালী সিম্বল, দৃঢ়তার প্রতীক।

বর্তমান আধিপত্যবাদ কেবল রাষ্ট্রকেন্দ্রিক কোনো ব্যাপার নয়, আধিপত্যবাদ একটা সামাজিক সমস্যায় এসে উপনীত হয়েছে। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, বর্তমান বাংলাদেশে আধিপত্যবাদ একটি ‘সরকারি সমস্যা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। আপনি দেখুন, রাষ্ট্রের প্রতিটি বিভাগে একদল লোক ক্ষমতাসীন দলের তোষণের নামে অফিসে অফিসে আধিপত্য বিস্তার করে বসে আছে। তারা সচিবালয় থেকে শুরু করে পোস্ট অফিস পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। তারা আছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে, আছে ব্যাংকে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-মাদরাসা-মসজিদ সব জায়গায়, তারা আছে ভূমি অফিসে, গ্যাস-বিদ্যুত-পানি দপ্তরে, উপজেলার প্রতিটি সরকারি দপ্তরে, আধা সরকারি এবং বেসরকারি অফিসেও তারা আধিপত্য বিস্তার করে সাধারণ জনগণকে শোষণ করছে। তাদের আধিপত্য বিস্তারের প্রধান ও একমাত্র হাতিয়ার—তারা সরকারি দলের লোক। এটা ‘নব্য সামাজিক আধিপত্যবাদ’। ভিন্ন রাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তারের চেয়ে এই নব্য আধিপত্যবাদ অধিক ভয়াবহ, সামাজিক উন্নয়ন কাঠামোর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরানো ভিপি নুরকে যদি আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বা ডাকসুকেন্দ্রিক সমস্যা বলে পাশ কাটিয়ে যেতে চান, সেটা বড় বোকামি হবে। আবার তাকে যদি আপনি রাজনীতির দাবার ঘুঁটি বানিয়ে নোংরা চাল চালতে চান, তাহলে সেখানেও বাংলাদেশ এবং এর জনগণের লাভের খাতা শূন্য থাকবে। ভিপি নুর বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের প্রতিবাদের প্রতীক, যারা মৃত্যু-গুম-জেলের ভয়ে স্তব্ধ হয়ে আছে।