‘কাল একুশে ফেব্রুয়ারি। গাঁজাখোররা বেদম ফুল কিনছে। পরশু এই ফুলগুলোর ওপরই প্রস্রাব করবে, ব্যবহৃত কনডম ফেলবে।’আজ সকালে (২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০) এ পোস্টটি আমার চোখে পড়ল। যিনি লিখেছেন তিনি সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি বলে বিবেচিত এবং আমার পরিচিত। তাঁকে উদ্দেশ্য করে নিজের আত্মশুদ্ধির জন্য কিছু কথা বলি—

ভাই, যে গাঁজাখোর লোকটি কাল ফুল কিনবে—সে কে? ফুলের উপর পেশাব করবে বলে যাকে ভাবছেন—সে কে? সেখানে ব্যবহৃত কনডম ফেলবে যে যুবক—সে-ই বা কে? এদের কাউকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন আপনি? প্রায়ই দেখা হয় তাদের সঙ্গে? পথেঘাটে হরহামেশা?

কেন তাদের প্রতি আপনার এত ঘৃণা? মানুষই তো তারা। মুসলমানও হয়তো। কালেমা জানে, কখনোসখনো নামাজও পড়ে বা। কে জানে, হয়তো তাবলিগে তিন দিন সময় লাগিয়েছে কখনো। মুশরিক তো না, বে-ঈমান কাফেরও বলা যাবে না। তবু তাদের প্রতি আপনার প্রবল ঘৃণা। জানি না, একজন এলেমদার মুসলমান হিসেবে এমন ঘৃণা পোষার হকদার আপনি কি-না; আর সে-ই বা এমন ঘৃণার যোগ্য কি-না।

একটু খেয়াল করে দেখুন, রাস্তায় হাঁটলে আপনার পাশ ঘেঁষে এরা হেঁটে যাবে, আপনার সহযাত্রী হবে বাসে। চা খেতে বসলে এরা চা খাবে একই বেঞ্চে বসে, নামাজ পড়তে গেলে কখনো আপনার পাশে জিন্স-টিশার্ট পরে নামাজেও শরিক হতে পারে তাদের কেউ কেউ। পারে না? মুসলমানের বাচ্চা তো!

কিন্তু গাঁজাখোর, ফুলের উপর পেশাবকারী বা ব্যবহৃত কনডম ফেলে দেয়া যুবকটিকে আপনার ঘৃণা উপহার দেয়া তো কোনো সমাধান নয়। মানুষকে অযাচিত কারণে এত সহজে নগন্য ঘৃণার বস্তু বানিয়ে ফেলবেন না।

মানুষ পাপে ডুবে যাচ্ছে, পঙ্কিলে হাবুডুবু খাচ্ছে। এটা সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক ফিতরত। একজন মুসলমানের এমন কঠিন বেদনার মুহূর্তে আপনি তাকে রি রি ঘৃণায় দূরে সরিয়ে দেবেন না। সে একটা ভালোবাসার মমতামাখা হাতের জন্য আহাজারি করছে। তার মন পাপে ঝলমল করছে ঠিক, কিন্তু ঘন অন্ধকারে নিমজ্জমান তার আত্মা তার রুহ হাহাকার করছে এক ফালি সবুজ আলোর জন্য। আপনি ওই আলোটুকু হোন। আপনি গাঁজা ফুল আর পেশাব সরিয়ে ভালোবাসা দিয়ে ওই পাপীর হাতটা ধরুন। দেখবেন, ভালোবাসার কাছে সমগ্র পৃথিবী কাঙাল।

ঘৃণা নয়, আমাদের রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের ২৩ বছরের দাওয়াতি জীবন কেটেছে এভাবে ভালোবেসে পঙ্কিল থেকে মানুষকে আলোর মিছিলে শামিল করতে। সমস্ত সিরাত পড়ুন, সকল হাদিস অধ্যয়ন করুন; আপনার ব্যবহৃত একটা বাক্য এমন পাবেন না যেটা রাসুল আরবের সবচে নিকৃষ্ট কাফেরের জন্য ব্যবহার করেছেন। রাসুলের অভিধানে ‘ঘৃণা’ বলে কোনো শব্দই খুঁজে পাবেন না আপনি।

হোক সে একুশে ফেব্রুয়ারির ফুল মাড়িয়ে গার্লফ্রেন্ডের হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো কেউ, একজন মুসলমানের প্রতি এমন কদর্য ঘৃণাপোষণ তো উম্মতে মুহাম্মদির উদাহরণ নয়।

ভাই, এটাই ইসলাম। প্রতিজন মানুষকে ভালোবাসুন। তাদের পাপে নিজের অপারগতায় কাঁদুন, তাদের পুণ্যে শোকরিয়া জ্ঞাপন করুন। আপনি একদিন ভুলে যাবেন—কীভাবে মানুষকে ঘৃণা করতে হয়।