একজন কিশোর বা একজন কিশোরী বহুভাবে কষ্ট পেতে পারে। তার সামনে কষ্ট পাওয়ার এত এত উপকরণ থাকে যে, ঘণ্টায় ঘণ্টায় তার কষ্ট পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা চারপাশে ঘুর ঘুর করে।

কিশোর বয়সটা দারুণ স্পর্শকাতর। কেন? বলছি সে কথা।
আমরা যখন শৈশব থেকে কৈশোরে পদার্পণ করি, ধরুন, বয়স দশ-বারো থেকে যখন তেরো-চৌদ্দ-পনেরোতে উত্তীর্ণ হয়; তখন আমাদের শারীরিক এবং মানসিক অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়। সাধারণ ভাষায় আমরা এটাকে বলি বয়ঃসন্ধিকাল। মানে, আমরা তখন শিশু থেকে পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার প্রথম ধাপে পা রাখি। তখন কেবলই আমরা যৌবনের অনেক কিছু বুঝতে শিখি, অনেক কিছু জানতে পারি, অনেক অজানা কিছুর সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হই।
এবং সবচে বড় বিষয় হলো, এ বয়সে আমাদের মানসিক মনটা আমাদের নিজেদের হয়। বুঝিয়ে বলি। যখন আমরা শিশু ছিলাম তখন তো নিজেদের ভালো-মন্দটা নিজেরা নির্ধারণ করতাম না। মা-বাবা বা ভাই-বোনেরা আমাদের যাবতীয় ভালো-মন্দ তদারক করতেন। কিন্তু যখন আমি কিশোর হলাম তখন সবকিছু আমার হলো। আমার চাহিদাও হলো আমার মনের মতো।
শিশু বয়সে আমার সুখ-দুঃখের কারণগুলো ছিল খুব সীমিত। এটা পেলে ভালো লাগতো, ওটা না পেলে কান্না করতাম। কিন্তু কৈশোরে এসে সেই চাওয়াগুলো ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। তখন চকোলেট দেখলেই আর খেতে ইচ্ছে হয় না। ভূত দেখে আর ভয় করে না। আমাদের চোখ দিয়ে আমরা চারপাশের দুনিয়াটা অন্যরকম করে দেখতে লাগলাম।
এমনকি আমি আমার ভালোলাগাগুলো লুকিয়ে ফেলতে শিখলাম। দুঃখ-কষ্ট যেগুলো আমি চারপাশ থেকে পাচ্ছি সেগুলোও লুকিয়ে ফেলার নানা কায়দা কানুন শিখে গেলাম। কিন্তু সমস্যা তো রয়ে গেলো। এই যে আনন্দ এবং দুঃখ আমি মনের ভেতর লুকাতে লাগলাম, আমার মনটা তো তখনও অত বড় নয়। মনটা এখনও শৈশবের গন্ধে বিভোর, কেবলই বড় হচ্ছে। ওইটুকুন ছোট মনে এত কষ্ট কি লুকিয়ে রাখা যায়? ধারণ করা যায় সকল দুঃখ?
যায় না। ফলে কী হয়? আমরা তখন অনেক কষ্ট পাই। দেখা যায়, খুব সামান্য বিষয়, কিন্তু আমাদের কাছে সেটাই অনেক বড় দুঃখ লাগে। কারণ আমাদের ছোট মনটা ওই ছোট কষ্টটাকে ধারণ করতে পারছে না।
যখন আমরা আরেকটু বড় হই, আঠারো-বিশ যখন আমাদের বয়স হয় তখন আমরা আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে শিখি। আমাদের মনটা তখন আরও বড় হয়। দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-সুখ আমরা তখন নিজেদের মনের ভেতরে লুকিয়ে রাখতে পারি। আমরা আরও বড় হই। তখন আর খুব একটা কষ্ট হয় না। কষ্ট দেখতে দেখতে আমরা কষ্টকে ডালভাত করে ফেলি। আস্তে আস্তে সবকিছু আমাদের সয়ে যায়।

সুতরাং ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিছুদিন পর আমিও শিখে যাবো সব লেনাদেনা। দুঃখ কীভাবে জয় করতে হয়, সেই তাবিজ-মন্ত্র আমিও জেনে যাবো। আর মাত্র কয়েকটা দিন, ব্যাস!


মাসিক নবধ্বনির নভেম্বর ২০১৮ সংখ্যায় প্রকাশিত