সাইমুম সাদী ভাই আমার বেশ পুরোনো গুরু। আমি তখন পড়তাম মিরপুরের ৬ নং মাদ্রাসায়ে দারুল উলুমে। আমাদের ক্লাসে পড়তো সাদী ভাইয়ের শ্যালক সালমান তারেক শাকিল। বর্তমানের বিরাট সাংবাদিক। শাকিলের সঙ্গে খুব দোস্তি হলো সে সময়। আমার লেখালেখির তামান্না দেখে শাকিলই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো সাদী ভাইয়ের সঙ্গে। এর আগে সাদী ভাইয়ের লেখা কিছু বইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিলো, ‘আবাবীল সিরিজ’ নামে একটা সিরিজ লিখেছিলেন সম্ভবত। কয়েকটা খণ্ডই প্রকাশ হয়েছিলো।

যা হোক, সাদী ভাই তখন ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বে আছেন। সারাদিন নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত। তাঁর এই ব্যস্ততার মাঝে আমি সামান্য গল্প-টল্প লিখে নিয়ে তাঁকে দেখাতাম, কবিতাই মনে হয় বেশি দেখাতাম। সাদী ভাই আগ্রহ করে আমার লেখা দেখে সংশোধন করে দিতেন, পিঠও চাপড়ে দিতেন। সাদী ভাই তখন ‘মাসিক অঙ্গীকার’ নামে একটা ম্যাগাজিন শুরু করেছেন। সেখানে আমার গোটা দুয়েক ছড়াও ছাপা হলো। কিন্তু ছড়া-কবিতার প্রতি আমার কেন যেন বরাবরই অনাগ্রহ ছিলো, আমি সাদী ভাইকে আধুনিক গদ্যকবিতা দেখাতাম। কিন্তু ওই বয়সের গদ্যকবিতা তো বেশ যাচ্ছেতাই ছিলো। সাদী ভাই দেখে বলতেন, ‘তুমি আল মাহমুদ পড়ো। দেখো, গদ্য হলেও তার কবিতায় কিন্তু একটা ছন্দ আছে।’ তিনি আমাকে আল মাহমুদের ‘…মকতবের আয়েশা আক্তার’ এরকম একটা কবিতার লাইন শোনালেন। সাদী ভাইয়ের মুখে শোনা আল মাহমুদের ওই একটা লাইনই আমার ভাঙা ভাঙা মনে আছে। জীবনে আমার আর আল মাহমুদ পড়া হয় নাই।

আমার অনীহা দেখে সাদী ভাই বললেন, ‘তাহলে তুমি গল্প লিখো, কিংবা থ্রিলার বা সায়েন্স ফিকশও লিখতে পারো।’ আমি টান টান উত্তেজনার থ্রিলার লেখায় মনোযোগ দিলাম। একটা থ্রিলার গল্প অঙ্গীকারে ছাপাও হয়েছিলো কী-না, এখন আর মনে নেই। তবে অঙ্গীকার পত্রিকাটা কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো, আর তাঁর শ্যালক সালমান তারেকও ৬ নং মাদ্রাসা ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। তবু সাদী ভাইয়ের সঙ্গে আমার নিকটতম সম্পর্ক বজায় ছিলো বেশ কিছুদিন।

এরপর নানা ঝড়-ঝাপটায় সাদী ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ কমে গেছে। কিন্তু মনে মনে গুরুভক্তি ব্যাপারটা সর্বদা সমাসীন। পল্টনে দেখা হলে বা কোনো প্রয়োজনে ফোনে কথা হলে সাদী ভাইয়ের প্রতি একটা ভক্তির স্থান বরাবর উপস্থিত থাকে।

আজ সকালে সাদী ভাই ফোন করে যখন জানালেন, ‘আপনার প্রিয়তমা পড়লাম। চমৎকার সুপাঠ্য বই। হাদিসের ভাষ্য নিয়ে এমন গল্পভাষ্য চিন্তাই করা যায় না! চালিয়ে যান। কী লিখছেন সামনে…?’

আমি আবেগে আপ্লুত হই। সময় হয়তো অনেক গড়িয়েছে, কিন্তু তবু তো গুরু। নিজের গুরু যখন শিষ্যের সামান্য কর্মে অভাবিত প্রশ্রয় দেন, তখন বুকের ভেতর একটা অযাচিত সুখানুভূতি ফুরফুরে দোলা দিয়ে যায়।

সাদী ভাই, আপনাকে লাল সেলাম!

পুনশ্চ: সাইমুম সাদী ভাইয়ের নাম আদতে রুহুল আমীন সাদী। তিনি কেন সাইমুম সাদী লিখেন, সে তথ্য আমার আজও অজ্ঞাত!