মনে হয় যেন এক কোটি বছর হয়ে গেছে আমি সদরঘাটে গিয়ে বসি না। এই শহরে আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা সদরঘাট। সদরঘাটের রেলিঙে বসে শোনা লঞ্চের হুইসেল, নদী পারাপার নৌকা, মানুষের হইহুল্লোড়, তাদের ব্যস্ত যাওয়া আসা, পায়ের আওয়াজ, রিক্সার টুংটাং, চাওয়ালার ডাক, পুলিশের বাঁশি এবং আরো নানা হাবিজাবি—তবু এই সবকিছুর ভেতর দিয়ে বয়ে চলা নদীর যে একাগ্রতা, যেন সে এক অফুরন্ত জীবনের কথা বলে।

অনন্ত নিরবধি বয়ে চলা যে নদী, তার দিকে তাকিয়ে থেকে বহুবার উদাস হতে চেয়েছি। পারিনি। ভেবেছি, নদীর পাড়ে একা বসে একা একা নিজের দুঃখ নিজের কাছে বলব। অথবা গলা ছেড়ে একটা ভয়াবহ মরমী গান ধরব—

ও মুর্শিদ ও…

একে আমার ভাঙা নাও

তার ওপরে তুফান বাও

পলকে পলকে ওঠে পানিরে…

কখনো বলা হয় নাই এসব।

সন্ধ্যার পর যখন নদীর পাড়ে বসি, দেখি, দুই পাড়ের তীব্র নিয়ন আলো নদীর ঢেউগুলোকে যেন তীক্ষ্ণভাবে কেটে কেটে দিচ্ছে। ঢেউয়ের তালে দুলতে থাকে ছলকে ওঠা রঙিন আলো। সে ঢেউ মাড়িয়ে, ঢেউয়ের ছন্দদোলন দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে লঞ্চ—চাঁদপুর পিরোজপুর ভোলা বরিশাল ঝালকাঠি।

সদরঘাটে বসে বসে আমি এসবই দেখি। এ গন্ধে ভরা জল,ঘিঞ্জি মানুষ, চারদিকে শোরগোল; তবু এর মাঝে বসে থাকতে কেন ভাল লাগে—এর কোনো সাইন্টিফিক জবাব আমার জানা নেই। হয়তো নদী, তাই। নদী ও নারীই তো এমন—সকল যুদ্ধ তুচ্ছ করে যাদের ভালোবাসা যায়!


Leave a Reply

Your email address will not be published.