বাড়ি থেকে শশুরবাড়ি অটোতে গেলে পনেরো-বিশ মিনিট লাগে। মাগরিবের নামাজের আগে রওনা দিলাম। আজান হলো পথেই। শশুরবাড়ির কাছাকাছি এক মসজিদে এসে নামাজ শেষ করে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এমন সময় তাঁর ফোন— কই আপনে?
: এই তো আসতেছি।
: কদ্দুর আসছেন?
: কাছাকাছিই, বেশি সময় লাগবে না। 
: আহ হা, বলেন না কই আছেন এখন?
: এই ধরো…!

ও ববারবার জিজ্ঞেস করছে, আমিও ইচ্ছা করেই কথা বাড়াচ্ছি এদিক ওদিক ঘুরিয়ে। কারণ আমি ওদের বাড়ির একেবারে দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছি। সেটা ওকে বলছি না। আমার ইচ্ছা— কথা বলতে বলতেই একেবারে ওর সামনে গিয়ে হাজির হবো।

সত্যি সত্যিই ফোনে কথা বলতে বলতে বাড়িতে ওর সামনে গিয়ে হাজির হলাম। সারপ্রাইজড! দুজন হেসে ফেললাম একসঙ্গে।

কিন্তু ও দেখি বোরকা পরে বসে আছে। জিজ্ঞেস করলাম— এই ভরসন্ধ্যায় বোরকা পরে কই যাবে?
: আপনে তখন বললেন না কেন যে আপনে কাছাকাছি চইলা আসছেন? আপনারে ভয় দেখানোর জন্য বোরকা পইরা বাড়ির সামনে রাস্তার ওইপাশে দাঁড়িয়ে থাকার প্ল্যান করছিলাম। আপনে আসলেই হাত বাড়ায়া বলতাম— মিয়াভাই, কয়ডা ট্যাকা দেন না! কতোদিন বিরিয়ানি খাই নাই!!

প্রতিদান :
এর আগের দিনের কথা। আমার বাড়ি আসার কথা ছিলো একদিন আগে। কিন্তু একটা ব্যস্ততার কারণে আসতে পারিনি। ওইদিন ফজর নামাজ পড়ে রওনা হলাম। শাশুড়িআম্মাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম— আপনের কন্যা কী করেন? 
: উনি তো ফজর পড়ে আবার ঘুমাইছেন।
: তাহলে আর ডাক দিয়েন না। আমি আসতেছি।
: আচ্ছা।

আমার জন্য আম্মা বারান্দার গেট খোলা রাখছেন। আমি চুপটি করে বাড়িতে ঢুকতেই আম্মা চোখ ইশারায় দেখিয়ে দিলেন ‘উনি’ কোন রুমে ঘুমাচ্ছেন। আমি হাতের ব্যাগ রেখে চুপিচুপি উনার বিছানার কাছে গিয়েই— গুড মর্নিং বাংলাদেশ!

*আজকে তিনি আমাকে আগের দিনের প্রতিদান দিতে চাইছিলেন বোধহয়।

ম্যোরাল: সংসারজীবনে সারপ্রাইজ জিনিসটা দারুণ কাজের। খুব ছোট বা দামহীন জিনিস দিয়েও একজন আরেকজনকে সারপ্রাইজ দেয়া যায়। এটা পরস্পরের প্রতি ভালোবাসাকে নতুন করে ঝালিয়ে দেয়। লাইফে টুইস্ট নিয়ে আসে।

তো, আজকে আপনার ‘উনাকে’ কী সারপ্রাইজ দেয়ার কথা ভাবছেন?