মৌলিক রচনার প্রধানতম উপকরণ হচ্ছে সৃষ্টিশীলতা। মৌলিক যেকোনো লেখার জন্য লেখকের অন্দরে আবশ্যিকভাবে একটি সৃষ্টিশীল হৃদয় থাকা বাঞ্চনীয়। এই সৃষ্টিশীল হৃদয় তৈরি হয় শৈশব-কৈশোরে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়ই বলতে হবে, আমাদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সৃষ্টিশীলতার তেমন কোনো কদরই করা হয় না। কদর না করলেও না হয় কথা ছিল, বরঞ্চ যেকোনো উপায়ে প্রাতিষ্ঠানিক নানা বিধি-নিষেধের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীলতাকে ধ্বংস করা হয়।

এখনও বাংলাদেশের অধিকাংশ মাদরাসায় পত্র-পত্রিকা বা পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বই পড়া নিন্দনীয়। আর সাহিত্যধর্মী বই পড়া তো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। যদি বা কোনো শিক্ষার্থীর ব্যাপারে জানা যায় যে সে আধুনিক লেখকদের গল্প-উপন্যাস বা সাহিত্যধর্মী বই-টই পড়ে, অথবা কবিতা লিখে বা সাহিত্য নিয়ে দু-চার কলম লিখে, ক্ষেত্রবিশেষ মাদরাসা থেকে বহিষ্কারের ঘটনাও অপাংক্তেয় নয়। মোটকথা, কওমি মাদরাসা—যেখান থেকে আকসার ইসলামি লেখক/অনুবাদক উঠে আসেন—সেখানে কোনোভাবেই সৃষ্টিশীল লেখালেখির পরিপোষণ হচ্ছে না।

এ থেকে সহজেই অনুমেয়, ইসলামি লেখালেখির আঁতুড়ঘরেই মৌলিক লেখার প্রচেষ্টাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। কিন্তু তবু যে ছেলেটির লেখালেখির ঝোঁক আছে সে তো নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারে না। সে কোনো না কোনোভাবে চুরি-চামারি করে গোপনে কলম দাগানো জারি রাখে। কিন্তু সৃষ্টিশীলতা পরিপূর্ণ বিকশিত না হওয়ার ফলে তার লেখালেখি হয়ে উঠে অনুবাদনির্ভর। কেননা, লেখালেখি জারি রাখার সহজসাধ্য মাধ্যম এটিই। একসময় এটিই হয়ে পড়ে তার লেখালেখির একমাত্র উপায়।

এজন্য আমি মনে করি, কওমি মাদরাসাগুলোতে সৃষ্টিশীলতা পরিপোষণের মেজাজ তৈরি করতে হবে এবং সৃষ্টিশীলতা প্রকাশের নানা মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দিতে হবে। যার লেখালেখির মনন আছে তাকে বিশ্বসাহিত্যের বইপত্র পড়তে দিতে হবে। কেবল আবু তাহের মিসবাহ’র বইসমগ্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেই হবে না, এগুলোই একজন সাহিত্যসেবীর আখেরি কথা! বরঞ্চ তাকে বাংলা সাহিত্যের সকল প্রবাদপ্রতীম লেখকের বই পড়তে দিতে হবে। একই সঙ্গে যাদের চিত্রকলার প্রতি আগ্রহ, আঁকতে পছন্দ করে, তাদের ক্যালিগ্রাফি, নেচার পেইন্টিং, বিমূর্ত ছবি আঁকার উৎসাহ ও সুযোগ করে দেয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই দায়িত্ব। সঙ্গীত, বিজ্ঞান, হস্তশিল্প—যার যেমন সৃষ্টিশীল মেধা ও আগ্রহ আছে সেগুলোতে উৎসাহ দিতে হবে পরিবার ও শিক্ষকদের।