২০১৩ সালের জুন মাসে এই কবিতা লিখেছিলাম মাসিক নবধ্বনির প্রচ্ছদে, শাপলা চত্বরে হেফ!জত আন্দোলনের পরের মাসে। এরপর পেরিয়েছে মাত্র নয়টি বছর। নয়টি বসন্ত দেখেছে বাংলার পলিমাটির মানচিত্র। নয়টি শ্রাবণে বাংলার খাল-বিল-হাওড়ে ফুটেছে অগণিত লাল-সাদা শাপলা। নয়বার ৫ মে এসে বিদায় নিয়েছে এই নগরীর পাথরপ্রাচীরের অন্তরালে।

কিন্তু রক্তঋণী এই পাথর কি ভুলে গেছে সেই রক্তের দাগ? এই পাষণ্ড নয় বছরে বুকের গহীন কার্নিশে লুকানো স্রোতেলা ক্রোধ কি মিইয়ে গেছে হাওয়ায়?

না। পাথরের কার্নিশ চুইয়ে এই নগরীর পাতালে নেমে গিয়েছিল যে তাজা রক্তের ধারা, নয় বছরে সেই রক্তঋণ উর্বর করেছে নগরীর পাপদগ্ধ মাটি। যে স্লোগান স্তব্ধ করে দিতে রাত্রি অন্ধকারে দাগানো হয়েছিল রাইফেলের গুলি, সে স্লোগান ইথারে মিশে নয় বছরে হাওয়াকে শিখিয়েছে পরাগায়ণের গোপন মন্ত্র।

আজ সেই মাটি আর হাওয়ার সম্মিলিত ঐকতানে নগরীর প্রতিটি ঘরে ঘরে জন্ম নিয়ে সহস্র অযুত চারাগাছ। নবীন একেকটি চারাগাছ নগরীর প্রতিটি রাজপথ দখল করে তুলছে সেই সে নবীপ্রেমের আওয়াজ, নয় বছর আগে যে রাজপথে ঝরেছিল অগণিত নবীপ্রেমিকের বুকের রক্ত; আর ভোরের রৌশনিতে ধুয়ে মুছে ছাফ করা হয়েছিল তাদের রক্তের দাগ। আজকের চারাগাছগুলো নবীপ্রেমের সেই রক্তের ঋণ শোধ করতে আবার তুলেছে গগনবিদারী স্লোগান।

শুনতে পাও তাদের তকবিরধ্বনি?

তুমি বুটজুতা দিয়ে নগরীর পাথরে থেতলে দিতে পারো শত নবীপ্রেমিকের কণ্ঠ। নয় বছর পর দেখবে—বাংলার প্রতিটি ঘরে তারা অনির্বাণ শিখা হয়ে জ্বলে উঠবে। বছরে বছরে গ্রাম-বাংলার প্রতিটি ক্ষেতে তারা দুলে উঠবে গ্রীষ্ম-হেমন্তের অবিনাশী শস্য হয়ে। তাদের মৃত্যু নেই। চারাগাছেরা কখনো মৃত্যুর ভয়ে বালির নিচে মাথা দাবিয়ে রাখে না। তারা হাজার বছর ধরে মাথা উঁচু করে বাঁচার তালিম নিয়ে আসছে। তুমি তোমার বন্দুক আর চক্রান্ত দিয়ে তাদের উড্ডয়ন রুখতে পারবে না।

————————

বিরহে কাতর নই হে রোদেলা পথ

হে শহরের পাষণ্ড পাথর দেয়াল

শ্রান্তিতে ঘুমায়নি রাত্রিজাগা চোখ;

তোমার ঘৃণার কাছেআজ পরাজিত রক্ত নামের যে স্রোতেলা ক্রোধজেনে রেখো, রক্তঋণী এই পাথর থেকেইএকদিন জন্ম নেবেআমার রক্তশোধের চারাগাছ।