বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে শ্রীরমেশচন্দ্র মজুমদার-এর ‘বাংলা দেশের ইতিহাস’ বইটি সুধীমহলের বিচারে অবশ্যপাঠ্য। হওয়ারই কথা। বাংলাভাষায় বঙ্গের সামগ্রিক ইতিহাস নিয়ে এ বইয়ের নির্ভরযোগ্যতা অসামান্য।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার কয়েক বছর পর আরসি মজুমদার (সংক্ষেপে আরসি মজুমদার ডাকা হয় তাঁকে) ইতিহাস বিভাগের প্রধান এবং ১৯৩৭ সালে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একাডেমিক ব্যক্তি হিসেবে তাঁর অবদান ও রচনা ঈর্ষণীয় নিঃসন্দেহে।
কিন্তু ‘বাংলা দেশের ইতিহাস’ গ্রন্থটি ঐতিহাসিক গ্রন্থের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করলেও এ গ্রন্থ সাম্প্রদায়িকতার দোষে বেশ দুষ্ট। এটি আজকের কথা না, বহু বছর ধরেই এ আলোচনা চলমান। এমনকি দিব্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত এ বইয়ের অধুনা সংস্করণের ভূমিকায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনাওয়াজও বিষয়টি প্রণিধান করতে বাধ্য হয়েছেন। (কমেন্টে পৃষ্ঠার ছবি দেখুন)
ইতিহাসের বই যে ধর্মের লেখকই লিখুক, আমি উদার মন নিয়েই পড়ার চেষ্টা করি। লেখকের নিজস্ব ধর্ম বা মতবাদের প্রতি নিজের দুর্বলতা থাকে। সেসব সাধারণত প্রচ্ছন্নভাবে লেখায় এক-আধটু এসেও যায়। ওটুকু গা-সওয়া। কিন্তু এ বইটি পড়তে গেলে স্থানে স্থানে হিন্দুয়ানী জয়কার এমনভাবে চোখে লাগে, বইয়ের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই তখন প্রশ্ন তৈরি হয়। বঙ্কিমচন্দ্রের ম্লেচ্ছ-যবন-নিধন প্রভাব যে মজুমদারের ওপর প্রকটভাবে ভর করেছিল, সে বেশ বুঝা যায়।
বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে গেলে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস, ব্যক্তি, স্থান, কালের বর্ণনা আসবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই ইতিহাস-বর্ণনা যদি পক্ষপাতিত্বমূলক হয় তবে লেখকের কলমে ইতিহাস তো সত্য বলবে না। কালোকে কালো আর ধুসরকে ধুসরই বলতে হবে। এটাই একজন ঐতিহাসিকের কাজ।
আরেকটি বিষয়। মজুমদার সাহেব হিন্দুধর্মের কোন বর্ণের লোক ছিলেন আমি জানি না। তবে বইটি পড়ে মনে হয়েছে তিনি বর্ণপ্রথার রূঢ় প্রবক্তা ছিলেন। ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শূদ্র—এ শ্রেণিবৈষম্য তিনি প্রণোদনা দিয়েছেন অনেক ক্ষেত্রে।
উপসংহার
বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে কাজ করার অদম্য ইচ্ছাকে বহুদিন পোষ মানিয়ে রেখেছি। সাধ ও সাধ্যের সামঞ্জস্য হয়নি বিধায় এগুনো হয়নি। কিন্তু মানুষের ইচ্ছাশক্তি বড় অদ্ভুত, অসম্ভব জেনেও সে মনে মনে পরিকল্পনা সাজাতে থাকে। ইতিহাসের নানা দস্তাবেজ হাতড়াতে থাকে এখানে ওখানে। কিন্তু ও পর্যন্ত গিয়েই থমকে যায়, স্বপ্ন আর বাস্তবের বড় ফারাক।
তাই সাজাতে থাকি পরিকল্পনা, একদিন না একদিন বাস্তবে রূপলাভ করবেই ইনশাআল্লাহ!