আধুনিক পুঁজিবাদ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কোনো ‘হিরোইজম’ (ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিবিশেষ, নতুন দিনের আওয়াজ উত্তোলনকারী, সমাজ বদলে দেবার বিপ্লবী উদোক্তা) তৈরি হতে দিচ্ছে না। রাজনীতিতে হিরোইজম নতুন বিপ্লব এবং ধারা বদলের জন্য যেমন আবশ্যিক প্রয়োজন, তেমনি পুঁজিবাদের জন্য এটা সবসময়ই শঙ্কার কারণ। রাজনীতিতে নতুন কোনো ধারা বা ইজম সৃষ্টি মানেই পুঁজিপতিদের সঙ্গে বুর্জোয়া শাসকগোষ্ঠীর সঙ্ঘবদ্ধ মাড়োয়ারী ব্যবসাবাধাগ্রস্ত হওয়া। কেননা পুঁজিবাদের বিস্তারের জন্য গণতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণের নামে বস্তুবাদী শোষণ অপরিহার্য বস্তু।
ব্যবসায়ীর চকচকে নোট যতোদিন রাজনীতির ছালে জেল্লা ডলাডলি করবে, ততোদিন রাজনীতিতে ভালো কিছুর আশা করা বৃথা। তেমনি ক্যারিশমাটিক রাজনৈতিক ক্যারেক্টারের স্বপ্ন দেখাও বৃথা। এর সবচে বড় উদাহরণ বাংলাদেশের (আপাত) নপুংসক কম্যুনিস্ট দলগুলো।
এই হিরোইজম ইগনোরেন্সের ফলে মুসলিমবিশ্বেও উল্লেখযোগ্য কোনো হিরোর আগমন স্থায়িত্ব লাভ করছে না। সবচে বড় শঙ্কার কারণ হলো, মুসলিমবিশ্বে কেউ একজন হিরোর তকমা নিয়ে উঠে দাঁড়ালেই সঙ্গে সঙ্গে তার জামা-পাজামার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জঙ্গিত্ব উদ্ঘাটিত হয়ে যাচ্ছে। হোক সে কারজাভির মতো স্কলার, জাকির নায়েকের মতো দায়ি, বিন লাদেনের মতো চরমপন্থী কিংবা ব্রাদারহুডের মতো কোনো সংগঠন। মুসলিমবিশ্বে কোথাও কেউ হিরো হয়ে দাঁড়াতেই পারছে না।
আরও চিন্তার বিষয় হলো, মুসলিমবিশ্বে প্রচুর পরিমাণে বিভাজন তৈরির ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে। সুন্নি, হানাফি, সালাফি, দেওবন্দি, আহলে হাদিস, লা মাজহাব, সুফি, কাদেরি, আরবি, অনারবি … এমন নানা টার্মে মুসলিমদের মাঝে বিভাজনের মজাদার ফেতনা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই ফেতনামোহী জনতার সামনে যখন কোনো হিরোর উত্থান ঘটে, মুসলিমদের মধ্যে সর্বপ্রথম প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়- সে কোন ফেরকার লোক? কিংবা কোন মাজহাব অনুসারী? নিজের মাজহাব অনুসারী না হলে এই লোক পরিত্যাজ্য।
এটি একটি সুদূরপ্রসারী গেম প্রজেক্টের ফলাফল। এই গেম এখনও চলছে, বরং দিন দিন আরও পোক্ত হচ্ছে। গেমের নতুন নতুন প্রোডাক্ট আমাদের মধ্যে ছাড়া হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন হাততালি দিয়ে সেই গেমের কুশীলবকে তুমুল আনন্দ দিচ্ছি। বস্তুত আমরা গিনিপিগ ছাড়া আর কিছুই নই। আমরা জাস্ট ম্যাঙ্গো মুসলিম পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ!
মুসলিমবিশ্বের জন্য সর্বসময়ে হিরোইজম আবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। এটা অস্বীকার করার জো নেই।