শহর থেকে আমাদের নির্দিষ্ট যুবকটি হারিয়ে যাবার পর
শহরের লোকজন এক রাতে আবিস্কার করলো
প্রতিরাতে গল্প শোনার মতো তন্ময় শ্রোতাটি আর
ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখছে না রূপালি রূপকথা
শহরের ইলেকট্রিসিটি আলোর নিচে টুপটাপ রিকশা, ঝিরঝির পথচারী
শহরের জানালাগুলো থেকে উঁকি দেয়া ঘরোয়া পর্দা, প্লেটোনিক চাঁদ
এসব বিষয় নিয়ে যুবকটি কথা বলতো দার্শনিকের মতো
শহরের শেষপ্রান্ত থেকে প্রতিদিন দুপুরে যখন সে হেঁটে আসতো
তার সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে মিলিশিয়া সৈনিকদের মতো
হেঁটে আসতো তিনটি কুকুর, শহরবাসী এই চার যুবকের নাম দিয়েছিলো
ফাদার তেরেসা, তাতে যুবকের কিছু যায় আসেনি
কারণ যুবক মানবসেবায় তেমন একটা বিশ্বাসী ছিলো না
সে বিশ্বাস করতো রোদ ও বৃষ্টিতে, তার প্রগাঢ় বিশ্বাস ছিলো মাটির বিরুদ্ধে
সে কথা বলতো ইতিহাসের মতো, নদীর মতো ছিলো তার নিঃশ্বাসের শব্দ
আমরা যে নির্দিষ্ট যুবকটির কথা বলছি এবং হারানো সংবাদ জানাচ্ছি আপনাদের
সে হারিয়ে গেলো হেমন্তের শেষদিকে, সঠিক তারিখটি কেউ বলতে পারেনি,
তাছাড়া শহরের যুবতীদের কানের দুলে লেগে থাকা রক্ত শুকিয়ে গিয়েছিলো
ওড়নার আঁচল থেকে খসে পড়েছিলো তুলতুলে বনেদি অশ্রু
কেউ দেখতে পায়নি, শহরের একমাত্র অন্ধ ভিখারিটি
দিনের পর দিন শুয়ে রইলো রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে
তার ঝোলার মধ্যে খুচরো পয়সার বদলে জমতে লাগলো শুকনো বকুল
তিনটি কুকুর একবারও হাঁক দেয়নি রাত কিবা দিনে
তারা মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে ইদানীং শুনছিলো বাউল করিমের গান
এসবই শীত পুরোপুরি জাঁকিয়ে আসার আগের কথা
আমাদের ছোট্ট শহরের শীতালো বিকেলগুলোতে যুবকটিকে নিয়ে
আমরা খুব বেশি বিব্রত হইনি আর, যুবকটির নিখোঁজ সংবাদ আগেই জানানো হয়েছে আপনাদের
আমাদের শহরের সবচে বড় কড়ই গাছটির নামে
একটি বেনামী চিঠি এলো একদিন, গোলাপি খামের উপর লেখা-
প্রযত্নে কড়ই গাছ, কড়ই চত্ত্বর, কড়ইপাড়া, কড়ইশহর
আমাদের শহরের পঞ্চায়েতে এ নিয়ে হাসির রোল পড়ে গেলো
শহরের গণ্যমান্য লোকদের সামনে খোলা হলো সে চিঠি…
পরদিন শহরের একটি মেয়ে আত্মহত্যা করলো নদীতে ডুবে
আমরা আসলে কোনোদিন বুঝতেই পারিনি, যুবকটি ভালোবেসেছিলো
শহরের একটি বোবা মেয়েকে
ইয়া আফরোজা কাব্যগ্রন্থ থেকে