আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া এই বিড়ালছানার চোখ দুটো অদ্ভুত রকম। তার ডান চোখ নীল, বাম চোখ স্বাভাবিক হলদেটে।

আগের যে দুটো ধাড়ী বিড়াল ছিল তাদের এখন আর দেখি না। অপোষ্য বিড়ালের ব্যাপারে এই একটা বিষয় আমি খেয়াল করেছি। কোনো বাড়িতে যদি বিড়াল আশ্রয় পায়, জীবনের সঙ্গীন সময়ে এরা নিরুদ্দেশ হয়ে যায় এবং তাদের নিরুদ্দেশের অল্প সময় পর আবার নতুন এক বা একাধিক বিড়াল সেই বাড়িতে আশ্রয় নেয়। বিড়াল গোত্রের মধ্যে সম্ভবত এমন কোনো নির্দেশিকা রয়েছে, কোনো বাড়িতে প্রজন্ম ধরে বিড়ালের পুষ্যি হলে সে বাড়ি ছাড়তে নেই। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তারা স্বেচ্ছায় পোষ্যতা গ্রহণ করে।

এখন যে দুটো বিড়ালছানা জায়গা নিয়েছে, এরা কই থেকে এসেছে, কার ছেলেপুলে, এ বিষয়ে কিছুই জানি না। একদিন দেখি, ছোট্ট দুটো সাদা ছানা ঘরের পেছনে মিঁউ মিঁউ করছে। আমরা তাদের তাড়িয়েও দেইনি, আবার আহ্লাদ করে ঘরেও নিয়ে আসিনি। আমাদের খাওয়া দাওয়ার পর নিয়মমাফিক এঁটোকাঁটা তাদের জন্য বরাদ্দ হতে থাকল। ফলে তারা বুঝে নিয়েছে, এ বাড়িতে আর যাই হোক, দুটো খেয়ে পরে বেঁচে থাকা যাবে। তাছাড়া এ-বাড়ি ও-বাড়ি যদি কিছু উপরি খাওয়া পরার বন্দোবস্ত হয় তাহলে তো কথাই নেই। সুতরাং আমাদের বাড়িতে তাদের একটা হিল্লে হয়ে গেল।

বিড়ালের দুই চোখ দুই রং হওয়া বিষয়ে নেট ঘেঁটে যা জানলাম:

বিড়ালের ক্ষেত্রে এটাকে বলে ‘কমপ্লিট হেটেরোক্রমিয়া’। যার ফলে একটি চোখ নীল বর্ণের এবং অপরটি স্বাভাবিক অর্থাৎ হলুদ বর্ণের (হলুদ, সবুজ বা তাম্র বর্ণও হতে পারে)। এই ধরনের হেটেরোক্রমিয়া বিরল হলেও অস্বাভাবিক নয়। আরও দু ধরনের হেটেরোক্রমিয়া দেখা যেতে পারে, পার্শিয়াল হেটেরোক্রমিয়া অর্থাৎ একই চোখের মণি দু ধরনের রং বিশিষ্ট অথবা সেন্ট্রাল হেটেরোক্রমিয়া যেখানে চোখের মণির কেন্দ্রে এক রং এবং পরিধি বরাবর অন্য রং দেখা যায়।

যখন একটি ছানা বিড়ালের জন্ম হয় তখন তার চোখের মণি স্বাভাবিকভাবে নীল থাকে। জন্মের পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মেলানিন উৎপন্ন হতে থাকে। মেলানিনের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে চোখের মণির বর্ণ। নীল রংয়ের চোখ থাকার অর্থ তার একটি চোখে মেলানিনের অস্তিত্ব নেই। যে জিন মেলানিনের জন্য দায়ী সেই জিনই আবার ত্বক ও লোমের বর্ণ নির্ধারণ করে। সেই কারণে odd eyed cat-এর ক্ষেত্রে দেহের বর্ণ সম্পূর্ণ সাদা অথবা আংশিক সাদা হয়ে থাকে।

সাধারনত ৭০% ক্ষেত্রে odd eyed বিড়ালের কোনো সমস্যা থাকে না কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে চোখটি নীল বর্ণের সেই দিকের কানে congenital deafness বা বধিরতা সৃষ্টি হয়। দুটি চোখই যদি নীল বর্ণের হয় সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বধিরতা জন্ম নেওয়ার ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়।

বিড়ালের জীবনও বড় রহস্যময়, কমরেড!


Leave a Reply

Your email address will not be published.