নবম শতকের প্রাচীন বাগদাদের বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘বায়তুল হিকমাহ’র (House of Wisdom) গবেষক ছিলেন তিন ভাই। একসঙ্গে তাদের বলা হতো বনু মুসা (Musa brothers): মুহাম্মদ ইবনে মুসা, আহমদ ইবনে মুসা, হাসান ইবনে মুসা।
এই তিন ভাইয়ের বিশেষত্ব কী, জানেন? এদেরকে বলা হয় রোবটিক সাইন্সের জনক। হাউজ অব উইজডমে তাদের গবেষণার বিষয় ছিল রোবটিক সাইন্স, অটোমেটিক ডিভাইস ও মেশিন, গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান। নানা ধরনের অটোমেটিক যন্ত্র বানিয়ে সে সময়ের মুসলিম বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন মুসা ভাইয়েরা।
এই ভ্রাতৃত্রয় তাদের আবিষ্কৃত ১০০টি অটোমেটিক ডিভাইসের বর্ণনা দিয়ে একটি বই লিখেন। বইটির নাম আরবিতে ‘কিতাবুল হিয়াল’, ইংরেজিতে ’বুক অব ইনজিনিয়াস ডিভাইসেস’। এ বইয়ের মূল একটি কপি বর্তমানে কাতারের জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
বীজগণিতের জনক আল-খারেজমি’, সার্জারি ও নিউরোসার্জারির পথপ্রদর্শক আল-জাহরাবি, মহাকাশবিজ্ঞানের মাস্টার নাসিরুদ্দিন তুসি—এমন আরও কত শত বিজ্ঞানী ও স্কলারের জ্ঞান-গবেষণায় ঋণী হয়ে আছে আজকের পৃথিবী; আমরা কি কখনো সেসব জানার চেষ্টা করেছি? মুসলিমদের হাত ধরে কীভাবে বদলে গিয়েছিল পৃথিবীর বিজ্ঞান ও সভ্যতার গতিপথ, সেই তথ্য ও গল্প আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা কখনো কি অনুভব করেছি আমরা?
মুসলিম বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানচর্চা ও আবিষ্কারের গৌরবময় গল্পগুলো শিশুদের বলার ইচ্ছা ছিল অনেক আগে থেকেই। তারা যাতে এই পৃথিবীর সামনে মাথা উঁচু করে বলতে পারে, এই আধুনিক সভ্যতা নির্মাণে আমাদের অবদান তোমাদের কারো চেয়ে কম নয়। আমরাই ইউরোপকে শিখিয়েছিলাম কীভাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যালয় গড়তে হয়। কেননা উচ্চশিক্ষার জন্য মুসলিমরাই সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠা করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়: তিউনিসিয়ার জায়তুনা বিশ্ববিদ্যালয়, মরক্কোর কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়, মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। তখনকার মুসলিম বিশ্বে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার স্রোত শুরু হয়েছে, ইউরোপ তখন কেবল প্রতিষ্ঠা করছিল তাদের প্রাইমারি স্কুল।
আলহামদুলিল্লাহ! অবশেষে ‘মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের গল্প’ নামে পাঁচটি বইয়ের একটি সিরিজ লেখা সম্পন্ন করেছি। শ্রদ্ধেয় Miraj Rahman ভাইয়ের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘সুলতানস’ থেকে শিগগির প্রকাশ হবে বইগুলো। বইয়ের সম্পাদনা ও ডিজাইনের কাজ চলছে। আপনাদের দোয়ার মুহতাজ!
বই প্রকাশের যাবতীয় শর্তাদি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর গত পরশু সুলতানস-এর অফিসে লেখক-প্রকাশকের মাঝে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিস্বাক্ষর হয়। মিষ্টিমুখও করানো হয়।
আল্লাহ আমাদের কাজকে কবুল করুন এবং সকল কাজ সহজ করে দিন। আমিন!