ঢাকার লোকাল বাসগুলোতে ক্যান্টিনের ব্যবস্থা রাখা অতি দরকারি বিষয়। সকালের নাস্তা করে মিরপুর থেকে বাসে উঠলে মতিঝিল পৌঁছতে পৌঁছতে দুপুর-খাবারের সময় চলে যায়। একে তো যানজটের যন্ত্রণা, তার ওপর ক্ষুধার চোটে পেটের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা—কতক্ষণ আর এভাবে কেচকি মেরে বসে থাকা যায়? দরকার হলে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন করে ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে।
বাসে একটা ক্যান্টিন থাকলে ফার্মগেট-বাংলামোটর পৌঁছে চারটে ডালভাত খেয়ে নেয়া যেত। ‘টাকার বিনিময়ে খাদ্য’—এই ব্যবস্থা থাকবে। হেলপার-কন্ডাক্টর ক্যান্টিনের বয় হিসেবে থাকল, ড্রাইভার পদাধিকার বলে ক্যাশিয়ার। হাঁটুর ওপর পোর্টেবল দস্তরখান বিছিয়ে বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু।
তরকারি হিসেবে কয়েক পদের ভর্তা রাখা যেতে পারে। ডাল এবং ঝোলসমৃদ্ধ তরকারি না রাখাই ভালো। বিভিন্ন প্রকার ভাজি রাখা যেতে পারে। ভেণ্ডি এবং করলা ভাজি রিকমেন্ডেশনালি তালিকায় থাকবে। তবে ঝালের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পাকস্থলীতে বায়ু উদ্গীরণ করে—এমন খাবার পরিবেশনেও বিরত থাকতে হবে। বাসের মধ্যে কারো ইজ্জত নষ্ট করার অধিকার আপনার নেই।
শাহবাগ পৌঁছতে পৌঁছতে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ হয়ে যাবে। জানালা দিয়ে হাত বের করে ধুয়ে নিলে সমস্যা নেই, রাস্তা তো এমনিতেই খানাখন্দে ভরা। সেগুলোতে আরেকটু পানি ঢালা গুরু অপরাধ নয়। চাইলে চিড়িক করে কুলির পানি বারডেমের ফুটপাতেও ফেলতে পারেন। তাতে ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমবে।
ছোট একটা ফ্রিজে ঠাণ্ডা পানীয় এবং ফ্লাস্কে ভরপুর চা থাকা বাধ্যতামূলক। খাওয়ার পর চা খাওয়া বাঙালির বনেদি ঐতিহ্য। আর যাই হোক, ঐতিহ্য নিয়ে হেলাফেলা চলে না। কয়েক খিলি পান রাখতেই হবে। পানখোরদের মতো হুজ্জতি খোর আর নাই। না পেলে ক্যান্টিনে ভাংচুর খুব স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।
বাসের সিটে বসে খাওয়া-দাওয়া পর্ব শেষ হওয়ার পর এবার ছোট্ট একটা ভাতঘুম। বাস এখন মৎস্য ভবনে। মাথাটা সিটে হেলিয়ে দিয়ে অথবা সামনের সিটের কাঁধে রেখে একটু ঘুম দেহমনে এনে দেবে প্রাণচাঞ্চল্য। চিন্তা করবেন না, শরতের স্নিগ্ধ বিকেলে যখন আপনার ঘুম ভাঙবে—তাকিয়ে দেখবেন, বাস দৈনিক বাংলার সামনে দাঁড়িয়ে। আর দূ…রে দেখা যাচ্ছে মতিঝিলের আকাশচুম্বী বিল্ডিংগুলোর ঝকঝকে চূড়া।
প্রতিজন যাত্রী গৌরবের লম্বা নিশ্বাস নিয়ে মনে মনে উচ্চারণ করবে—এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি…!