ধনী মানুষ আর গরিব মাইনষের কাপড়ের গন্ধ আলাদা।
পায়ে একটা মশায় কামড় দিলো, বিরিয়ানির দোকানে বইসা বিরিয়ানি খাওয়ার পর মশার কামড়ও খাইতেছি। লোকাল বিরিয়ানি। বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল্লাগে নাই, তাই বিরিয়ানির দোকানে আইসা বসছি।
দোকানের পাশে একটা শরবতের দোকান। দোকানে মাইক লাগানো, রেকর্ড করা ক্যানভাসার শরবতের নানান গুণাগুণ বর্ণনা করতেছেন— মহাশক্তি, নাড়ী ঠাণ্ডা, হাজার রোগের মহৌষধ। দাম মাত্র ১০ টাকা। এক বুইড়া বেটা বড় কাচের মগের এক মগ শরবত খাইলো খাড়ায়া খাড়ায়া। খয়েরি কালারের আঠালো তরল, উপরে তোকমাদানা ভাইসা আছে, কৎ কৎ কইরা গিললো। স্বাদ মনে হয় খারাপ না। এক মগ খাইতে ইচ্ছা হইতেছে।
হামমাদকে পাঠাইছি খবর নিতে। সে খবর নিয়া আসছে— তালমাকনা, তোকমাদানা, উলটকম্বল, পেস্তাদানা, শিমুলের মূল, কুশইলা গুড়সহ আরও নানান বনাজি দিয়া বানায় শরবত। দাম ১০ থিকা শুরু কইরা ১০০। কাস্টমারের ডিমান্ড অনুযায়ী বনাজি মিশায়। ২০ টাকার শরবতের নাম ঘৃতকুমারী। ৫০ টাকারটার নাম আবেহায়াত। নামের কেলাতি ভাল্লাগলো। এক মগ না খাইলে হইতেছে না।
শরবত আসছে। উপরে হাফ ইঞ্চির মতো ফেনা জমছে। ফেনাসহ চুমুক দিলাম। বনাজির গন্ধ আর তোকমাদানার পিছলা তরল—কোনটা প্রভাব বিস্তার করছে, এটা বুঝতে বুঝতে মগের অর্ধেক তরল গলার ভিতরে চইলা গেছে। চইলা যাওয়ার পর বুঝলাম—তিতা তিতা লাগতেছে। হামমাদ-এর অনুভূতি হইছে সিরাপের মতো। গ্রামের বাজারে এক ধরনের শালসা পাওয়া যায়—এর স্বাদ অনেকটা শালসার মতো।
বিরিয়ানির দোকানদারও এক মগ খাইলো। খাওয়ার পর মুখ মুছতে মুছতে বললো— শরবতে ভেণ্ডি দিবা। ভেণ্ডি দিলে আরও আঠা আঠা অইবো। জিহ্বা আর তাইলা জানি একটার সঙ্গে আরেকটা লাইগা যায়।
শরবতদার তার কথা ফিরায়া দিয়া বললো— ভেণ্ডি দিলে রাইতে খাউজাইতে খাউজাইতে বিচি ছুইলা যাইবো!
শরবতদারের স্বাস্থ্যসচেতনতা এবং সেন্স অব হিউমার ভালো লাগলো। গরিব মাইনষের সেন্স অব হিউমার বরাবরই ভালো। ধনী মানুষ অত্যধিক নেংটা জোকস বলে। জোকসের মইধ্যেও ধনী-গরিবের ব্যবধান আছে।
এই শরবত ধনী মাইনষে খাইলে হইতো হারবাল টনিক, আমি খাইছি—এখন এটা টঙ দোকানের বনাজি শরবত!
শালার… বৈষম্য জিনিসটাই চরম বৈষম্যের শিকার!