পড়ো, পড়ো এবং পড়ো…

তুমি যে অমানিশায় ঘুরপাক খাচ্ছো, হীনম্মন্যতা গ্রাস করে নিচ্ছে তোমার চলার গতি, হতাশায় মুষড়ে পড়ছো কখনো কখনো, এ-সব থেকে তোমাকে মুক্তি দেবে তোমার জ্ঞান-বিজ্ঞানের অধ্যয়ন। পড়তে থাকো…
পড়ো তোমার প্রভুর নামে…
পড়ো আধুনিক জ্ঞান ও বিজ্ঞান, পড়ো কুরআনের প্রতিটি আয়াত এমন নিমগ্নতায় যেন তোমার রব তোমার সঙ্গে কথা বলে। পড়ো শিল্পকলা, পড়ো ইতিহাস। পড়ো ধর্মের গভীরতা, পড়ো সৌরজগত নিয়ে। পড়ো সিরাত, পড়ো নৃবিজ্ঞান। পড়ো আসকালানি, পড়ো ওয়্যার এন্ড পিস। পড়া থামিয়ো না…
পড়ো তোমার বিশ্বাস এবং যা তুমি অবিশ্বাস করো…
সোস্যাল মিডিয়ার রংচঙে ঝকমারিতে সময় নষ্ট করো না। অন্যের উল্লম্ফন আর সেলিব্রেশন দেখে হতোদ্যম হয়ে যেয়ো না। তোমার সময়ও সমাগত। তুমি জ্ঞানের কাছে ফিরে এসো, জ্ঞান তোমাকে নিবিষ্টতার অনন্য উচ্চতায় উড্ডীন করবে। এমন উচ্চতা, যেখান থেকে সকল সেলিব্রেশন আর হৈ-হুল্লোড় মনে হবে ছেলেখেলা। সময়ের সঙ্গে স্রোতের টানে ভেসে যেয়ো না, তোমার নিজের স্রোত সৃষ্টি করো।
পড়ো জ্ঞানের জন্য। জ্ঞান তোমাকে মুক্তি দেবে…
দশম শতাব্দীর ইরানি বিজ্ঞানী ও দার্শনিক আবু বকর মুহাম্মদ ইবন জাকারিয়া আল রাজি (৮৬৫ – ৯৩৫) বলেছিলেন, `যারা আমার সাহচর্যে এসেছেন কিংবা আমার খোঁজ রাখেন, তারাই জানেন জ্ঞান আহরণের আমার কী আকুল আগ্রহ, কী তীব্র নেশা। কিশোরকাল হতেই আমার সকল উদ্যম, এই একটি মাত্র নেশায় ব্যয়িত হয়েছে। যখনই কোনো নতুন বই হাতের কাছে পেয়েছি কিংবা কোনো জ্ঞানীর সন্ধান পেয়েছি তখনই অন্য সকল কাজ ফেলে, বহু আর্থিক ত্যাগ স্বীকার করেও নিবিষ্ট মনে বইখানা পাঠ করেছি কিংবা সেই জ্ঞানীর কাছে যথাসাধ্য শিক্ষা গ্রহণ করেছি। জ্ঞান সাধনায় আমার এমন অদম্য উৎসাহ ও অসাধারণ সহিষ্ণুতার ফলেই মাত্র এক বছরে আমি কুড়ি হাজার পৃষ্ঠার মৌলিক রচনা লিখেছি (প্রতিদিন প্রায় ষাট পৃষ্ঠা) এবং তাও তাবিজ লেখার মতোই ঝরঝরে অক্ষরে। প্রায় পনের বছর আমি ব্যয় করেছি আমার বিরাট চিকিৎসা-অভিধান লিখতে। দিন-রাতে এমন কঠোর পরিশ্রম করেছি যে শেষে আমি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু এখনও আমার জ্ঞানপিপাসা মেটেনি। আজও আমি অন্যকে দিয়ে বই পড়িয়ে শুনি কিংবা আমার রচনা লেখাই।’
পড়ো, কারণ আল্লাহ বলেছেন ‘পড়ো’। পড়া ছাড়া সৃষ্টি হয় অজ্ঞানতা, আর অজ্ঞানতা তোমাকে পরিণত করবে ধর্মান্ধ।

অন্তর্দৃষ্টি অর্জনের জন্য পড়ো। আলোর জন্য পড়ো। আলো মানে নুর। আল্লাহু নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ…