সেদিন তুহিন খান বলেছিলো— আমরা যদি সবসময় কনজারভেটিভ (রক্ষণশীল) থাকি, যদি সবসময় আঘাত প্রতিরোধের চিন্তা করি, নিজেরা প্রতিপক্ষের চিন্তাকে প্রতিরোধ করার ব্যাপারেই সচেষ্ট থাকি… তাহলে প্রতিপক্ষ বারবার আমাদের আঘাত করতেই থাকবে। এবং তারা আমাদের প্রতিরোধ দেখে নতুন নতুন পন্থায় আঘাত করবে, আক্রমণের জন্য নতুন হাতিয়ার নিয়ে আসবে। তখন আমাদের দিন চলে যাবে প্রতিপক্ষের নতুন আঘাত আর নতুন হাতিয়ারের প্রতিরোধ চিন্তায়।যদি প্রতিরোধ করতে পারি তো প্রতিরোধ হলো, কিন্তু সমস্যার সমাধান হলো না। আর যদি না করতে পারি তাহলে সমাধান তো হবেই না বরং আমাদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।

তাহলে আমাদের কী করতে হবে? সহজ উত্তর— প্রতিরোধ চিন্তা বাদ দিয়ে আমাদের আঘাত করতে শিখতে হবে। সে আমার শিক্ষাকে আঘাত করছে, আমি তার মতাদর্শকে ভঙ্গুর প্রমাণ করবো। সে আমার চিন্তার দৈন্যতা নিয়ে অবহেলা করছে, আমি তার অন্তসারশূন্য দর্শন নিয়ে কটাক্ষ করবো। তারা আপনার প্রযুক্তি-অজ্ঞতার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলছে, আপনি তাদের আধুনিকতার ভুলপাঠ নিয়ে তাদের দেয়ালে ঠেসে দিন…।

দ্যাটস ইট! ইট ওয়াজ তুহিন’স থিওরিটিক্যাল ট্রিটমেন্ট ফর অপজিশনাল কনফ্লিক্ট…।

আমার চিন্তা—
আপনি যখন বলবেন—আমি কওমির সন্তান, কওমি মাদরাসা আমার অহংকার, কওমি মাদরাসা দীনরক্ষার প্রধান ঘাঁটি; তখন কিন্তু আপনার মাথায় থাকছে— কওমি মাদরাসার ওপরে প্রগতিবাদীরা যে আক্রমণ করছে… সেটা প্রতিহত করতে হবে, আমার ভালোবাসার কওমি মাদরাসাকে রক্ষা করতে হবে, কওমি মাদরাসার ওপর কারো হস্তক্ষেপ মেনে নেয়া হবে না…।

এমন চিন্তা আপনি কেন করছেন? করছেন কারণ হলো, আপনি প্রতিপক্ষের আক্রমণের প্রতিহতের বিদ্যাই শিখেছেন কেবল, আপনি প্রতিআক্রমণ করার শক্তি ও হাতিয়ার যোগাড় করতে পারেননি। আপনি শিখেননি—কীভাবে পাশ্চাত্যের ভলতেয়ার, বোদলেয়ার, ফ্রয়েডীয় দর্শনকে ইবনে খালদুন, ইবনে তাইমিয়া, সাইয়েদ কুতুব দিয়ে প্রতিহত করা যায় । আপনার সামনে তারা প্লেটো-অ্যারিস্টটলকে হাজির করবে, কিন্তু আপনি কখনো বাগদাদের বায়তুল হিকমাহ-হাউজ অব উইজডমকে স্থাপন করতে পারেননি। আপনি শেকসপিয়রের অবস্থানে কখনোই শেখ সাদিকে বসাতে পারেননি।

এ দায় আপনার, এ ব্যর্থতা আপনার! আপনি তাকে কখনো শেখ সাদি দিয়ে আক্রমণের চিন্তাই করেননি! তাকে কখনো জালাল রুমি দিয়ে প্রতিআক্রমণের ব্যাপারে ভেবেই দেখেননি! শুধু যখন সে আক্রমণ করেছে তখন আপনি ইমরাউল কায়েসকে দিয়ে তার আক্রমণ প্রতিহত করেছেন।

প্রতিরোধ দিয়ে আপনি কখনো সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য আপনাকে আপনার হাতিয়ার নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

তারা আপনাকে বিজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন করবে, আপনি তাদের কুরআনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান দিয়ে আটকে দিন…

তারা আপনাকে সাহিত্য দিয়ে তুলোধূনা করবে, আপনি তাদের পর্নোগ্রাফির ভয়াবহতার ব্যাপারে জানতে চান…

তারা আপনার সামান্য রোজগারের ব্যাপারে অবজ্ঞা করবে, আপনি তাদের কাছে সুখের সংজ্ঞা চান…

তারা আপনাকে পশ্চাদপদ বলবে, আপনি জিজ্ঞেস করুন—সতীত্বের দোকানদারি জায়েজ হলেই কি নারীমুক্তি, নারী স্বাধীনতার সনদ পাওয়া যায়?
নো কম্প্রোমাইজ!

তারা নবি মুহাম্মদ সা.-এর জীবনী বিকৃত করে বই লিখলে আপনিও তৈরি হয়ে যান, কমিউনিজমের গোড়ার বিপ্লবী ট্রটস্কি কার বউ নিয়ে ভেগে গিয়েছিলো… সে সত্য আপনাকেই খুঁজে বের করে তার জবাব দিতে হবে।

কিন্তু এখন আপনি যদি প্রতিপক্ষের পত্রিকার কলামের জবাব ফেসবুকের গালি পোস্ট দিয়ে দেন, তাহলে তো হলো না। আপনার ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করলেই যদি আপনি চাপাতি কাঁধে নিয়ে দৌড় দেন, তাহলে তো ভাই আমার এতো কথা বলার দরকার ছিলো না।

মাইন্ড ইট—নো কম্প্রোমাইজ!