এই কনকনা শীতে সকাল সকাল ক্ষেতে যাইতে হইল। না গিয়া তো উপায় নাই। জমিদার হইলে কী শীত আর কী বৃষ্টি, দুই সিজনে ধান তো বুনতেই হবে। এই ধানই তো আমাদের পরিচয়, আমাদের পেহচান, আমাদের আইডেন্টিটি।
আপনারা জানেন কিনা জানি না, বাংলাদেশে ইসলামের সম্প্রসারণের সঙ্গে এই ধানের রয়েছে এক নিবিড় সম্পর্ক। ধান বলতে আমাদের এই বঙ্গ অঞ্চলের যে কৃষি ব্যবস্থাপনা, এই কৃষি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে ইসলাম সম্প্রসারণের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। এ অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক সমাজের নানা উত্তরণের সঙ্গে ইসলামও নানামাত্রিকভাবে জড়িয়ে আছে।
পূর্বেকার বঙ্গের সমাজব্যবস্থা নগরকেন্দ্রিক ছিল না, ছিল গ্রামকেন্দ্রিক। আর প্রতিটি গ্রামই ছিল কৃষিনির্ভর। সুতরাং এখানে ইসলাম সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজন ছিল গ্রামীণ কৃষি সমাজের সঙ্গে ইসলামের একাত্ম হওয়া। সেই একাত্ম হওয়ার প্রধান মুজাহিদ ছিলেন এ অঞ্চলের কৃষক সমাজ। তারা ধান আর ক্ষেতের ফসলের সঙ্গে ইসলামকেও নিজেদের একান্ত আপন করে নিয়েছিলেন বলেই এখানে ইসলাম এত সুসংহত, এত সুদৃঢ়।
৭০০ বছর রাজত্ব করা সত্বেও আন্দালুসিয়া (স্পেন) থেকে মুসলিম শাসন সমূলে উৎপাটিত হয়েছিল। কারণ, সেখানকার মুসলিম শাসকবর্গ ইসলামকে নগরকেন্দ্রিক করে রেখেছিল এবং প্রত্যন্ত গ্রামীণ সমাজে ইসলাম সম্প্রসারণ করতে পারেনি। তাই স্পেন থেকে মুসলিম শাসকদের উৎখাতের মাধ্যমে সেখানকার ইসলামও নির্বাপিত হয়ে গিয়েছিল।
বাংলা এমন নয়। বাংলায় ইসলাম সম্প্রসারিত হয়েছে সুফি-দরবেশদের মাধ্যমে, শাসকদের মাধ্যমে নয়। আর এই সুফিদের প্রধান বিচরণক্ষেত্র ছিল বাংলার গ্রামীণ সমাজ। তারা বাংলার কৃষক আর ধান-পাটের সঙ্গে মিশে গিয়ে এ অঞ্চলের ইসলামকে প্রতিটি নদী, খাল-বিল, ক্ষেত, মাঠে পত্তন করে দিয়েছিলেন।
এ জন্য আপনি যে পর্যন্ত বাংলার ধান আর কৃষক সমাজের সঙ্গে মিশতে না পারবেন সে পর্যন্ত এখানকার ইসলামের অরিজিন ধরতে পারবেন না।