লিখেছেন : তামীম রায়হান

‘তাঁর সঙ্গে আমি একটি পাহাড়ি পরিবেশকে তুলনা করতে চাই। দূর থেকে তাঁর অবয়ব দর্শনার্থীকে ভীত করে তোলে। পাহাড়ের রুক্ষ চূড়া উঠে গেছে ওপরে। সমস্ত প্রতিবন্ধকতার ঊর্ধ্বে। কঠিন ও ধূসর পাথরের চাঁইগুলো ভয়াবহতা সৃষ্টি করে আছে। সবুজ বৃক্ষগুলোও তাতে ম্রিয়মান। নজরে আসছে, কিন্তু সেগুলোর সবুজাভ কোমলতা উবে গেছে। পেছনে উত্তুঙ্গ মেঘলোক পাহাড়কে আরো কর্কশ করে তুলেছে। খাড়া তলোয়ারের ধারালো উপস্থিতিকে সে মনে করিয়ে দেয়। অন্যদিকে সেই পাহাড়ে পৌঁছার রাস্তা অত্যন্ত বন্ধুর। বন্ধুরতা ও বিপত্তি উপেক্ষা করে সাহস মেখে যারা এগুবেন, তারা দেখবেন, পাহাড়টি একটি নিরিবিলি আশ্রয়, দূর থেকে দেখা অভিজ্ঞতার বিপরীতে একটি সচ্ছল অন্তর। ঊর্ধ্বমুখী পাহাড়গুলো ব্যক্তিত্বের প্রকাশ। আত্মবিশ্বাসে অটল, সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধিত্বশীল এক-একটি স্বাক্ষর। নির্মাণের সৌন্দর্যে দীপ্যমান এবং ভীতিহীন। পাথরের পাশেই প্রবাহিত তরল ঝর্ণা। শুভ্র ঢেউয়ের বুনেটে কারুকাজ করা পানির স্রোত। একটি ঐতিহ্যের ধারক, ধারাবাহী, কিন্তু প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল ও আধুনিক।’

আজ থেকে অনেক বছর আগে শেখ তোফাজ্জল হোসেন এ লাইনগুলো লিখেছিলেন কবি ফররুখ আহমদ স্মরণে। দূর থেকে এক রকম কিন্তু কাছে গেলে ভিন্নরকম, এমন দু’টি বিপরীতচিত্রের ব্যক্তিত্ব প্রসঙ্গে একটি সুন্দর বর্ণনা তিনি তুলে ধরেছেন এ কয়েকটি লাইনে। ঠিক একইভাবে যাকে নিয়ে এ লেখাটির মূল বিষয়, সেই তরুণ লেখক সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীরের বাহ্যিক এবং আত্মিক চরিত্র ও অবয়ব বোঝানোর জন্য আমি এই একই কথাগুলো তুলে ধরতে চেয়েছি। এখানে যেভাবে উপমা দেয়া হয়েছে, সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর এর চেয়ে মোটেও কম নন; বরং একটু বেশি হয়তো হতে পারেন।

সাহিত্যের এমন গুরুগম্ভীর বর্ণনা হয়তো সবার বুঝে আসবে না। তাই সাধারণভাবেই আরেকবার তার আকার তুলে ধরা যাক- মাথায় জালিটুপি, চোখে চশমা, হাতে ঘড়ি, পরনে পাঞ্জাবি পাজামা এবং পায়ে সাদামাটা চামড়ার জুতো- কিন্তু এসবের মধ্য দিয়েই ফুটে ওঠে একটি গভীর গোছালো অবয়ব, চালচলন ও কথাবার্তায় সৌম্য শান্ত ধীর- তিনিই সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর। নিজ থেকে আগ বেড়ে নবাগত কারো সঙ্গে কথা বলবেন না সত্য, কিন্তু চুপচাপ শোনার মধ্যে হঠাৎ করেই হয়তো এমন কিছু বলে ফেলবেন, যা সবাইকে অবাক করবে এবং এমন আকস্মিক মুখ খুলে তাক লাগানো কিছু একটা বলে তিনি নিজের সগর্ব উপস্থিতি জানান দেবেন সবার মধ্যে।

সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীরকে নিয়ে লিখতে হলে প্রথমেই ঠিক করে নিতে চেয়েছি, আমি তাকে যেমন দেখেছি এবং দেখছি, সেসব নিয়ে লিখবো নাকি অন্যরা তাকে যেমন দেখছেন তথা তিনি নিজেকে যেভাবে উপস্থাপন করছেন, সেটা তুলে ধরবো। কিন্তু এখন দেখছি, এই মানুষটিকে কোনোভাবেই নিজেদের বৃত্ত থেকে কিছুক্ষণের জন্য বের করে অন্যদের কাতারে রাখা যাচ্ছে না। যেভাবেই তাকে দেখতে চেয়েছি, তাতে তাকে কেবলই আমাদের একান্ত মানুষ বলে মনে হয়েছে। এমন আপনজনদেরকে নিয়ে যুৎসই মূল্যায়ন বেশ কঠিন ব্যাপার।

হাল আমলের ইসলামি ধারার লেখালেখি অঙ্গনে সদাব্যস্ত তরুণদের সংখ্যা এখন আর হাতেগোনা পর্যায়ে নেই। রীতিমতো ইসলামি লেখক ফোরাম গঠিত হয়েছে এবং এতে লিখিয়ে তরুণদের নাম-ঠিকানা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কাজেই ধীরে ধীরে এ অঙ্গনের পরিধি বাড়ছে, তরুণ ও নবীনদের আনাগোনায় মুখরিত হচ্ছে এ চেতনার খোলা আঙিনা।

সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর এ আঙিনার পরিচিত মুখ। শুধু পরিচিত নয়, বিশেষভাবে পরিচিত এবং বেশকিছু কারণে অনেকের কাছেই তিনি জনপ্রিয়। কেউ হয়তো জানেন অথবা জানেন না, সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর একাধারে লেখক এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনারও। আমাদের বন্ধুবৃত্তে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক পড়াশোনাটা তিনিই শুরু করেছেন আগে। লালবাগ মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস শেষ করে তিনি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। ইংরেজি সাহিত্য বিষয়ে তিনি অনার্স শেষ করেছেন।

সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় লালবাগ মাদরাসার আঙিনায়। সেবার আমি এবং তিনি দু’জনই নতুন ভর্তি হয়েছিলাম মেশকাত জামাতে। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সানাউল্লাহর সঙ্গেই তিনি চলাফেরা করতেন। মূলত মাসিক ম্যাগাজিন নবধ্বনিকে কেন্দ্র করেই তার সঙ্গে আমার সখ্যতা গড়ে ওঠে। তিনি সাফ আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই ম্যাগাজিনের উদ্দেশ্য কী? আমিও কোনো ভণিতা ছাড়াই বলেছিলাম, পেশাদারিত্ব। বাণিজ্যিক লাভের মাধ্যমেই এটিকে টিকিয়ে রাখতে হবে, পকেটের পয়সা খরচ করে নয়। তিনি এতে আশ্বস্ত হননি সেদিন, কিন্তু আমরাই তাকে মায়াজালে জড়িয়ে ফেলেছি সুকৌশলে। সেই থেকে আজ, তিনি নবধ্বনির হয়ে আছেন। আজও  অজস্র তরুণ তাকে চেনেন নবধ্বনির সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর হিসেবে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, নবধ্বনির প্রতিটি সংখ্যার সমৃদ্ধির জন্য পাঠকরা যে দু’য়েকজনের লেখা নিয়মিত পেতে চান, সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর তাদের মধ্যে সর্বশীর্ষে।

সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর লেখালেখি করেন। আমি যতদূর জানি, মাসিক রহমত-এর মাধ্যমেই তিনি লেখালেখিতে দক্ষ এবং মোটামুটি পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠেন। যেদিন তিনি প্রথম রহমত সম্পাদক মনযুর আহমদ-এর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন কামরাঙ্গীরচর মাদ্রাসায় মাসিক রহমত-এর কার্যালয়ে, সেদিন আমিও তার সঙ্গী হয়েছিলাম। সম্পাদক মনযুর আহমদ সেদিন তার পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, ‘আপনার লেখায় গভীরতা থাকে, আবার কখনো কখনো সেই গভীরতা অতল হয়ে যেন অন্য কোথাও হারিয়ে যায়।’

রহমত সম্পাদক মনযুর আহমদ সেদিন যা বলেছিলেন, আজও  আমি মনে করি, এ কথাটির মধ্যেই সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর-এর স্বাতন্ত্র্য লুকিয়ে আছে স্বমহিমায়। এখানেই তিনি এ ঘরানার অন্য লেখকদের চেয়ে আলাদা। লেখক হতে হলে যে ব্যক্তিসত্ত্বার স্বাধীনতা ও মানসিক সাহসিকতা থাকতে হয়, সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর সযত্নে নিজের ভেতর সেই চিত্ত লালন করে চলেছেন। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তিনি সাপ্তাহিক লিখনীর সহযোগী সম্পাদক হয়ে কিছু বাজারি লেখা লিখেছেন, কিন্তু এতে তার লেখকসত্ত্বার স্বাধীন চর্চা ও মর্যাদা এখনও ক্ষুণ্ন হয়নি বলেই আমার বিশ্বাস। কারণ, ক্ষণস্থায়ী মোহ আর সুনাম-সুখ্যাতির লোভ থেকে নিজের প্রতিভাসত্ত্বাকে পবিত্র রাখতে হলে যে অটুট মনোবল ও আত্মবিশ্বাস দরকার, সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর নিজের অজান্তে এর পুরোটা ধারণ করে চলেছেন।

সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীরকে যারা কাছ থেকে ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে দেখেছেন এবং দেখছেন, তারা হয়তো আমার সঙ্গে একমত হবেন, এই মানুষটি নিজের আবেগ-অনুভব লুকিয়ে রাখতে দারুণ পারদর্শী। তিনি অনেকের সঙ্গে মেশেন, আমার মতো অনেকের সঙ্গেই গল্প-গুজব করেন, হাসি-তামাশায় সময় ব্যয় করেন, কিন্তু এ সবই তার বাহ্যিক উচ্ছলতা। ভেতরে তার যে আসল অবয়ব, তার দেখা আমি পাইনি। তিনি নিজেকে এবং নিজের অকৃত্রিম স্বভাবজাত অনুভূতিগুলো সবার কাছ থেকে গোপন রাখেন, নিজের ভেতর চেপে রাখেন। অন্তত আমার আজও  মনে হয়, বাইরে যতই তার প্রাণখোলা হাসি হোক, ভেতরে তিনি আগাগোড়া একজন নিঃসঙ্গ মানুষ। আমাদেরকে নিয়ে তার যে বৃত্ত, তিনি এর কেন্দ্রে সশরীরে থাকেন সত্য, কিন্তু তার আত্মা পড়ে থাকে কোনো এক অজানার অরণ্যে, এ রহস্য অনস্বীকার্য।

২০০৯ সালে নভেম্বর মাসে প্রকাশিত মাসিক নবধ্বনিতে এক লেখায় তিনি লিখেছিলেন, ‘লেখার জন্য ছটফট করছি, কিন্তু লিখতে বসলে কলম দিয়ে মর্জিমাফিক অক্ষর বেরুচ্ছে না। নিদারুণ অসহায়ত্ব। সে যন্ত্রণার কথা কার কাছে বলি। অথচ আমার বলবার কথা আছে অনেক, মনে জমে উঠা সমবেত চেতনার চারাগাছের বয়োবৃদ্ধি লিখে জানানোর ব্যাকুলতা বেড়েই চলেছে। আমি সেগুলো জানাতে চাই। কেননা, জানানোটাই আমার সংগ্রাম। আমাকে জানাতে হবে। আমি সংগ্রাম ভালোবাসি। সংগ্রামকে ভালোবাসাই আমার ফরজিয়্যাত। তাই জানানোটাও আমার জন্য ফরজ।’

এ প্রসঙ্গে জানাতে চাইছি, সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর বেশকিছু খোলামেলা কিন্তু সাহসী কলাম লিখেছিলেন মাসিক নবধ্বনিতে। সেরকমই একটি লেখা, ‘দুশ্চরিত্রমুক্ত সিলেবাস চাই।’ এতে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমাদের এই সযত্নে লালিত কওমি মাদরাসা মসজিদে নববীর আলোয় উদ্ভাসিত শুদ্ধ একটি চরিত্র গঠনের রাহনুমায়ি করে। কিন্তু সেখানে যখন আবু তাইয়্যিব মুতানাব্বির মতো লম্পট লোকের কবিতা বড় নিপাট নির্দ্বিধায় পড়ানো হয়, তখন আমাদের লজ্জা হয়। সেসব কবিতায় এমন উপমা ব্যবহার হয়েছে যা একজন শিক্ষক হয়ে ছাত্রকে অনুবাদ করে শোনানোর মতো নয়। ইমরুল কায়েসের মতো দুশ্চরিত্রের কবির কবিতা নিয়ে আমাদের আহ্লাদের কমতি নেই। সাবয়ে মুআল্লাকায় এমন সব কবিতা সন্নিবেশিত হয়েছে যার ভদ্রতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাই একটি প্রশ্নের বিষয়।’

কওমি মাদরাসা, কওমি সিলেবাস এবং কওমি স্বীকৃতি প্রসঙ্গে এমন সাহসী আলোচনা ও সমালোচনা লেখার সাহস ও সাধ্য সবার হয়ে উঠে না। সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীরের এমনই আরেকটি সাড়াজাগানো লেখা ‘রক্তে কেনা কওমী মাদরাসা : বিক্রির জন্য নহে’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি লিখেছিলেন, ‘স্বাধীনতা, তোমাকে অর্পিত প্রার্থনা নষ্ট হয়’, এবং আরেকটি লেখা ‘স্বাধীনতার এক, দুই, তিন’। বৈশাখ নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘বৈশাখের দর্পণে লাল-সবুজের প্রতিবিম্ব’। সমসাময়িক প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন ‘কিছু ক্ষোভ পুষতেই হয়’, ‘অনিরুদ্ধ কলমের কথা’সহ বেশকিছু হৃদয়জাগানিয়া প্রবন্ধ-নিবন্ধ।

তরুণদের জন্য তার লেখা প্রবন্ধের সংখ্যাও কম নয়। ‘ওরে ও তরুণ ঈশান, বাজা তোর প্রলয় বিষাণ’ প্রবন্ধে তিনি তরুণদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘লোকলজ্জার মিথ্যে জঞ্জাল পায়ে দলে বেরিয়ে আসতে হবে আজ। আমি মাদরাসায় পড়ি বলেই আমি সবচে বেশি ধার্মিক, ভাঙতে হবে এই সংকীর্ণ মনোভাব। একজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও হয়তো অনেক মাদরাসা পড়ুয়ার চেয়ে বেশি যাহেদ, মুত্তাকী।’

তার এমনই আরেকটি প্রেরণাদায়ক লেখা ‘যে পথে জীবন্তিকার ভুল ট্রেন’ প্রকাশিত হয়েছিল মাসিক নবধ্বনির জুলাই-২০০৮ পাঠকসংখ্যায়। ‘চোখ দেখে যাও পাখি, চোখের ভেতর অন্ধ পাতার ডাক’, ‘বলার কিছু কথা ছিল, সময় হবে কি শোনার?’ শিরোনামে প্রকাশিত তার লেখাগুলোতে পাঠক খুঁজে পান অন্য এক সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীরকে, এবং একই প্রসঙ্গে ‘আপন পরিচয়ের খোঁজে’ লেখাটিও তার গভীর ভাবনা ও সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক বহন করে।

এ তো গেল কেবলমাত্র নবধ্বনিতে প্রকাশিত তার অসংখ্য লেখাগুলো মধ্যে দুয়েকটির কথা। এ লেখাগুলো তিনি আমার তাগিদে এবং বলা চলে, জোর করে লিখিয়ে নিতাম বলেই তিনি লিখতেন। এর বাইরে মাসিক রহমতসহ অন্যান্য শিল্প-সাহিত্যের ম্যাগাজিনগুলোতেও তার লেখা সমাদৃত এবং প্রশংসিত হয়েছে। বিষয়বস্তুর বৈচিত্র এবং লেখক হিসেবে পাঠকের কাছে নিজের বার্তাটুকু পৌঁছে দিতে পারার সাফল্য পাঠকসমাজে সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীরকে অন্য অনেকের চেয়ে ভিন্ন মর্যাদা ও মহিমায় সমুন্নত করেছে।

ইতোমধ্যে তার বেশকিছু বইও প্রকাশিত হয়েছে। সাধারণত আমরা যেমন দেখি, পরিচিত কারো বই প্রকাশিত হলে সে অন্তত নিজে এসে বইটি হাতে তুলে দেয়, উপহার হিসেবে নিজের হাতে দু-চার শব্দ লিখে দেয়, কিন্তু সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীরের বেলায় এসবের আশা করা অর্থহীন বোকামি। কয়েক বছরের সঙ্গী হিসেবে আমি অন্তত তার প্রকাশিত কোনো বই তার কাছ থেকে আজ অবধি পাইনি। তার ভেতর এ জাতীয় কোনো কৃত্রিম সংস্কৃতি নেই বলেই তিনি এসবের ধার ধারেন না। এমনই বিচিত্র এবং রহস্যময় আবহে বাস করেন বলেই হয়তো তিনি নিজস্ব চেতনার শুদ্ধতা এবং লেখালেখির স্বকীয়তায় সবার চেয়ে আলাদা।

সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীরের মতো এমন ধীশক্তির প্রতিভাবান আমাদের সমাজে অনবরত জন্মগ্রহণ করে না। বরং যুগে যুগে এমন আপন আলোয় আলোকিত তরুণের সংখ্যা হাতেগোনা। জীবনসংসারের ব্যস্ততায় সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর হয়তো তার স্বভাবজাত প্রতিভা ও স্বকীয় চেতনার চর্চা থেকে কখনো যদি উদাসীন কিংবা বিমুখ হয়ে যান, তবে এতে এ সমাজ এবং এ দেশ ও জাতির যে অপূরণীয় ক্ষয় হবে- সেটা কি তিনি এড়িয়ে যেতে পারেন! চারপাশে আজ অস্থির সময়, তবুও আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, যে অপার সম্ভাবনা এবং অপরিসীম আত্মশক্তি নিয়ে সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর আমাদের আঙিনায় আলো ছড়াচ্ছেন, তা কখনো মলিন হবার নয়। এ প্রদীপ্ত সূর্যের আলোয় উপকৃত হতে হলে তার সময়োচিত মূল্যায়নও আমাদের দায়িত্ব, তাতেও যেন ভুল না হয়।