আমি যেসব গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠি, জ্বরের আরামে শরীরজুড়ে আড়মোড়া ব্যথা, মাথার ভেতর কাচের ছুরি খচখচ করে নিউরনের গলি-ঘুঁপচি, যেন হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে শরীর থেকে মাথা, ঘাড়ের উপর তাকে ধরে রাখা দায়। চোখের ভেতর থেকে বেরুচ্ছে যেন আগুন, যেমন দুই পা—গরমে পুড়ে যাচ্ছে। যেমন দুলে উঠা শরীর, যেমন ভারী হয়ে থাকা জিভ, কখনো ঘাম দিয়ে ছাড়ে জ্বর, কখনো ছাড়ে না।

এসব জ্বরতপ্ত ব্যারাম জড়িয়ে ধরে ফেসবুকে আমিও কূট-ক্যাচালে ঝাঁপাই কখনো। বিচ্ছিরি লাগে। তবু কখনো মনে হয়, নিরবতাকে মানুষ দুর্বলতা ভাবে। কারো প্রতি বিনয় দেখালে সে মনে করে, নতজানু ছোটলোক। আমার তাতে কিছু যায় আসে না। আমাকে ছোট করে তুমি বড় হও। তবু বড় হও, চিন্তায় ও বিশ্বাসে। দেখো, কীভাবে আকাশের গা বেয়ে উঠে যাচ্ছে জিবরাইলের ডানা, তুমি জিবরাইলের সমান বড় হও। কেমন করে সমুদ্র থেকে মাছেরা লাফ দিয়ে চড়ে বসছে স্পেসশিপে, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ থেকে পাঠানো অনন্ত নক্ষত্রবীথির স্থিরচিত্র সামনে নিয়ে তোমার জন্য প্রার্থনা করি—তুমি একেকটা নক্ষত্রের সমান বড় হও। তারপর ছুঁয়ে ফেলো মহাকাশ, ঈশ্বরের সঙ্গে হোক মুলাকাত, কথাবার্তা হোক।

আমার চোখের সামনে দিয়ে প্রতিটা আদমসন্তান আল্লাহর সঙ্গে জান্নাতের চুক্তি করে পাড়ি দিচ্ছে মহাকাশ, এ তো আরাধ্য। প্রতিজন মানুষ অনন্ত পরকালে নরক নয়, স্বর্গের ডুপ্লেক্স ভিলায় অধিষ্ঠিত করুক নিজেদের রুহ, হিংসাহীন মানুষ হিসেবে আমি তো এই চাই। তুমি যদি চাও অল্প কিছু মানুষ কেবল পাবে স্বর্গ-ফ্ল্যাটের মালিকানা, বাদবাকি সবাই যাবে নরক-আগুনে; তাতে কী লাভ তোমার? আদম থেকে কেয়ামত তক সকল মানুষ স্বর্গে গেলে তোমার স্বর্গ ছোট হয়ে যাবে? হুর-গিলমানে কম পড়ে যাবে তোমার? বুঝি না আমি, মানুষ বেহেশতে গেলে তোমার কেন জ্বলেরে বন্ধু, তোমার কেন জ্বলে…! তাছাড়া বেহেশত তো তোমার বাপেও বানায়নি। যেমন দোজখ বানায়নি তোমার দাদা। কে তুমি এখানে বসে জান্নাত-জাহান্নামবাসীর তালিকা তৈয়ার করছো?

কুকুর বিড়াল জলহস্তী গাধা খাটাশ এবং মুকুটহীন সম্রাট—এরা সব এক কাতারের লোক। তবু আমার ভয় হয়, ভোলার চরফ্যাশনে হয়তো অনেক মানুষের চুলোয় রান্না হয়নি কুরবানির ঈদে এক টুকরো মাংস। বন্যায় ভেসে গেল যার ঘরদোর, বাড়ির উঠোন, স্বপ্নের অনেক অনেক দস্তাবেজ; তার জন্য কে প্রার্থনা করবে? আমি যখন কাউকে নাস্তানাবুদ করতে কূট-ক্যাচালে লাভ করছি পৈশাচিক আনন্দ, বারবার চোখ রাখছি ফেসবুক নোটিফিকেশনে; তখন দুর্যোগে সর্বস্ব হারানো কোনো নারী ভাবছে—আত্মহত্যা করা কী এমন মহাপাপ? ভাবি, মানুষ কবে মানুষ হবে!

কখনো পরিবর্তন দরকার হয়ে পড়ে। পায়ের জুতো, চলতি অ্যাকাউন্ট, নিস্তরঙ্গ সম্পর্ক, ফেসবুক পাসওয়ার্ড, কবিতার ছন্দ, রোজগারের মাধ্যম, গভীর সমুদ্রবন্দর—পরিবর্তন প্রয়োজন বৈকি।