মাওলানা তারিক জামিল সাহেব বলেন:

‘…আমার শহর তালাম্বা’য় রূপপূজারীর বাজার আছে।১৮১৮ সালে রণজিৎ সিং মুলতান জয় করে। মুলতান জয় করার পর তিনি সেখানে তিনটি রূপপূজারীর বাজার চালু করেন- মুলতান, কারোরপাক্কা এবং তালাম্বা। তালাম্বা আমার নিজ শহর। শহরের তিন কিলোমিটার দূরেই আমার বাড়ি।

তিন বছর আগে আমি সেখানকার (তালাম্বার) বাঈজি মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে যাই (দাওয়াতি)। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমার কলিজা ফেটে যাবার জোগাড় হয়েছিলো। ঘুঙুর পরে নাচনেওয়ালি বাঈজি মেয়েরা কী পরিমাণ জুলুমের শিকার, তাদের সঙ্গে কথা না বললে কোনোদিন বুঝতে পারতাম না।

মেরে ভাই, কোন মেয়ে চায় নিজের শরীর বিক্রি করে টাকা কামাতে? কোন কিশোরী আনন্দের সাথে নিজের শরীর টাকার বিনিময়ে ভিনপুরুষের হাতে বেচতে চায়?

(কান্না…) আমাকে মাফ করবেন, আমার আবেগ আমার আয়ত্তে নেই। বড় দুঃখ নিয়ে কথা বলছি। আজ আমি বক্তা নই, আমি এক ফরিয়াদি হয়ে কথা বলছি। আজ এক আগুন আমার ভেতর থেকে বের হয়ে আসছে। ভাষা নয়, আমার আবেগের অনল ভাষা হয়ে কথা বলছে আজ। আমি মাফ চেয়ে নিচ্ছি যদি আমার কথায় কোনো ভুল হয়ে যায়। আবেগের বশে যদি কোনো কঠিন কথা বলে ফেলি, আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি এখন নিজের মধ্যে নেই।

আমি আমার এলাকার কথা বলছি। ওই ঘুঙুরপরা নাচনেওয়ালি বাঈজিরা আমারই এলাকার মেয়ে। আমার এলাকার জমিদাররাই তাদের পায়ে ঘুঙুর বেঁধে দিয়েছিলো একদিন। তারা তাদের ওপর রহম করেনি, তাদের লালন পালন করার পরিবর্তে, তাদের বিয়ে করার পরিবর্তে তাদের পায়ে ঘুঙুর পরিয়ে দিয়েছিলো। তাদেরকে নিজেদের পাশবিক ক্ষুধার তাড়না বানিয়েছে, তাদেরকে নিজেদের খাহেশাতের শিকার বানিয়েছে।

আজ সারা দেশে ঘুরে দেখো, জিজ্ঞেস করো একজন নাচনেওয়ালির কাছে- সে কি নিজের খুশিতে নাচছে? কোনো এক পতিতার কাছে জিজ্ঞেস করো- সে কি নিজের ইচ্ছায় শরীর বিক্রি করছে? যাও, জিজ্ঞেস করো এসো একবার!

আর একবার তাদের জিজ্ঞেস করো, যারা এসব মেয়ের শরীর টাকার বিনিময়ে কিনে নিচ্ছে। তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করো, যারা নিজেদের খাহেশাত পূরণের জন্য গরিবের মেয়ের সম্ভ্রব টাকার বিনিময়ে অসভ্যভাবে ভোগ করছে। জিজ্ঞেস করো তাদের, যারা নিজেদের পাশবিক ক্ষুধা নিবৃত্ত করার জন্য সহায়হীন মেয়েদের পায়ে ঘুঙুর পরিয়ে নাচতে বাধ্য করে। জিজ্ঞেস করো তাদের, যারা হারাম পন্থায় টাকা কামাই করে এবং হারাম পথে তা খরচ করে।

তারা ভুলে গেছে, এক আল্লাহ উপরে আছেন। যিনি না ঘুমান, না জাগেন, না ক্লান্ত হন, না অপারগ হন, তিনিই একদিন সবাইকে বানিয়েছেন।…’

মাওলানা তারিক জামিল সাহেবের বয়ান থেকে

ইউটিউব টাইটেল : (Emotional incidents of Death)  Maulana Tariq Jameel Latest Bayan 2016


[ হায় মেরে মাওলা! আমরা কতো সহজেই একজন নারীকে বেশ্যা, নষ্টা, ভ্রষ্টা, চরিত্রহীন বলে দুর দুর করে ইসলাম থেকে তাড়িয়ে দেই। তাকে মুসলমান থেকে কাফের, নাস্তিক, মুরতাদ বানিয়ে দেই। আল্লাহ এতো বিশাল পৃথিবী বানিয়েছেন, এতো ভালোবেসে মানুষ সৃষ্টি করেছেন; আর আমরা নিরলসভাবে একে অপরকে ফাসেক, কাফের, নাস্তিক, দালাল, পশ্চিমা এজেন্ট, বেদ্বীন, পাপী, নষ্ট, ইসলাম থেকে খারিজের বন্দোবস্ত করে যাচ্ছি।

ভাই, কাউকে তোমার পছন্দ না হলে, তার কাজ পছন্দ না হলে আল্লাহর কাছে বলো আর চুপ থাকো। পারলে সত্য উপস্থাপন করো। এভাবে গালিগালাজ করো না। আল্লাহ বড় ভালোবেসে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তার মুখে এভাবে থুতু নিক্ষেপ করে আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টিকে অপমান করো না। আল্লাহ কষ্ট পাবেন।

আরে ভাই, আমার নবি তো আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের মতো স্বঘোষিত মুনাফেকের জানাজা পড়িয়েছেন, নিজের গায়ের জামা খুলে তার কাফন দিয়েছেন। তার লাশ যখন কবরে রাখা হয় তখন নবি বললেন- ‘তার লাশ তোলো।’ লাশ উপরে তোলা হলো। লাশ তোলার পর নবি নিজের মুখের লালা তার মৃত মুখে লাগিয়ে দিলেন। যদি এর বিনিময়ে তার নাজাত হয়ে যায়!

এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ ঘোষণা করে দিলেন, ‘আমার নবি! তুমি যদি সত্তুরবারও তার জন্য দোআ করো তবু তাকে আমি ক্ষমা করবো না।’

আল্লাহর নবি উমরকে ডেকে বললেন, ‘উমর, আল্লাহ যদি সত্তুরবার দোআ করার পর আমার দোআ কবুল করে তবে আমি আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের জন্য সত্তুরবারই দোআ করবো।’

ভাই, ইসলাম ভালোবাসার নাম, ঘৃণা-নাক সিঁটকানো-অহঙ্কারের নাম ইসলাম নয়।

আল্লাহ, তারিক জামিল সাহেবের জন্য জান্নাতি পরকাল কবুল করো!]