কুকুর-বিড়াল নিয়ে এ দেশের এক শ্রেণির তরুণ-তরুণীর মাঝে বিরক্তিকর আদিখ্যেতা বাড়ছে দিন দিন। যেকোনো প্রাণীকে ভালোবাসা এক জিনিস, আর পশ্চিমাদের দেখাদেখি আদিখ্যেতা শেখা ভিন্ন জিনিস। কুকুরের প্রতি প্রাণী হিসেবে আমাদের ভালোবাসা থাকাটাই স্বাভাবিক, আছেও। আমি নিজেও কুকুরের প্রতি প্রচণ্ডরকম সহমর্মী। রাস্তায় দেখা হলে তাদের সম্মান দেখিয়ে চলি। আর বিড়াল তো আমার ঘরে সারাদিন ঘুর ঘুর করে। তাই বলে কুকুর-বিড়ালকে কোলে নিয়ে জড়িয়ে ধরে, ‘ওলে আমাল বাবু…’ বলে চুমু দেওয়া, কুকুর জিহ্বা দিয়ে হাত বা মুখ চেটে দেওয়া, সেটার মুখের খাবার মহানন্দে নিজে খেয়ে যে আদিখ্যেতা দেখানো, এগুলো খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার।

ধর্মীয়ভাবে যদি দেখি, কুকুরের শরীর নাপাক নয়। তবে কুকুরের মুখের লালা নাপাক, অপবিত্র। সেটা শরীর বা কাপড়ে লাগলে উভয়টা ধুয়ে ফেলতে হবে। সুতরাং যারা কুকুরের চাটাচাটি পছন্দ করেন, তারা সারাদিন নাপাক হয়েই থাকছেন।
বিড়ালপ্রেমীদের নিয়ে হয়েছে আরেক জ্বালা। তাদের যদি বলি, ভাই/বোন, বিলাই নিয়া এত আদিখ্যেতার কী আছে? সঙ্গে সঙ্গে সে নবীজির সাহাবি আবু হুরাইরার বিড়ালপ্রীতি টেনে আনবে! এক আবু হুরাইরা দিয়ে তারা বিড়ালের প্রতি আদিখ্যেতা দেখানোর সকল কর্মকাণ্ড জায়েজ করে ফেলে।
এই তরুণ-তরুণীরা কুকুর-বিড়াল নিয়ে সারাদিন ওলে বাবু, ওলে বাবু করে; কিন্তু তাদের মা-বাবা বা পরিবারের কেউ যখন তাদের কোনো কারণে ডাক দেয়, তখন তারা মুখ ঝামটা দিয়ে বলে, ‘আমি আসতে পারব না…’ ‘যাও তো এখান থেকে…’!
রাস্তায় যদি তার আদিখ্যেতায় পোষা কুকুর-বিড়ালের সঙ্গে কোনো মানুষের হালকা টাচও লাগে, ওই মানুষটার প্রতি রাজ্যের ক্ষোভ নিয়ে দু-চারটা ইংরেজি গালি ঝেড়ে দেয়, ‘ইউ ব্লাডি ইডিয়ট’! ভাবটা এমন, ‘কোন অধিকারে তুই কুকুর-বিড়ালের পৃথিবীতে মানুষ হয়া জন্মাইছোস?’
পশ্চিমাদের কুকুরপ্রীতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে, ভাবনার বাইরে। কুকুর এখন প্রায় প্রতি পরিবারেরই সদস্য। সন্তান নেওয়ার আগে বা প্রসবের আগে একটি পরিবার যেমন নানামুখী প্ল্যান করে, অনাগত সন্তানের জন্য নানা আয়োজন করতে থাকে; ঠিক সেই অবস্থা হয় যখন তারা একটা কুকুরকে বাড়িতে নিয়ে আসে। তার থাকা-খাওয়া, হাঁটা-চলা, আনন্দ-বিনোদনের জন্য একটি পরিবার এন্তার প্ল্যান-প্রোগ্রাম করতে থাকে। পরিবারের সন্তান আর কুকুর সমান গুরুত্ববহ তাদের কাছে। কখনো বরং বেশিও। সেখানে সাধারণ মানুষ কোন ছার!
সম্প্রতি ডেনমার্কের একটি খবর বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সেখানকার মানুষেরা মাছ ধরার একটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের জন্য দেড় হাজার ডলফিন মাছ নিধন করেছে। সে এলাকার সমুদ্রে প্রচুর ডলফিন, লাখে লাখ। দুই-চার হাজার ধরলে খুব একটা কমবে না তাদের সংখ্য।
যা হোক, এই খবর এমন ফলাও করে সর্বস্তরের মিডিয়া প্রকাশ করেছে এবং হায় হায় করেছে যে, দেখে ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, ডাইনোসরের মতো ডলফিনও কি এক রাতেই বিলুপ্ত হয়ে গেল? মানবাধিকার, প্রাণি-অধিকার, কুকুরাধিকার, ডলফিনাধিকার—এমন আরও নানাধিকারী সংগঠন বিশ্বব্যাপী মাতম শুরু করে দিয়েছিল। যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থা নিখিল বিশ্বে!
সিরিয়ার ইদলিব, ইরাকের মসুল, আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফে প্রায়ই তো বোমা হামলা হয়, আত্মঘাতী হামলা হয়, ফায়ারিং করে মানুষ (?) মারা হয় নির্বিচারে। তাদের জন্য কি পশ্চিমাদের বা আমাদের তরুণ কুকুরপ্রেমীদের সমান দরদ হয়? ডলফিন বা কুকুর নিধনে তাদের বুকের মধ্যে যে শেল বিদ্ধ হয়, তেমন শেল কি বিদ্ধ হয় সিরিয়ান, ইরাকি বা আফগানিদের করুণ মৃত্যুতে? হয় কি? নিজের কাছে প্রশ্ন করো!
মানুষ কি কুকুর-বিড়ালের চেয়েও মূল্যহীন, নীচ জাত তোমাদের কাছে? হোক সে যেকোনো দেশের। ডলফিন আর কুকুরের মৃত্যুতে চোখে জল আসে, মানুষের মৃত্যু কেন তোমাকে ভাবায় না? হয়তো তোমার ভেতরের মনুষ্যত্বই মরে গেছে, সেটা পরিণত হয়েছে অন্য কোনো প্রাণিসত্তায়।

ধর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল লোকজন আশা করি আমাদের তরুণ সমাজকে কুকুর-বিড়াল ছেড়ে মানুষকে ভালোবাসার সবক শেখাবেন। তাদের অন্তরে মানুষের ভালোবাসা জাগরুক করা সবচে জরুরি কাজ!