অনেক আগে, আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে কাবুলের কথা

কাবুলে তখন অনেক মানুষ মারা যেত

অনেক মানুষ অস্ত্র নিয়ে ছবি তুলতো, ছবিতে তাদের নাম থাকত না

আমি কাবুলের একটা ছবিওয়ালা বই পাঠ করেছিলাম
এক সাংবাদিক সেই অস্ত্রাক্ত সময়ে কাবুল থেকে ফিরে
একটা ছবিওয়ালা বই লিখেছিলেন
বইটার নাম আমার মনে নেই
আমার চোখে কেবল লেগে আছে কাবুলের সাদাকালো ছবিগুলো
প্রতিটা ছবিতে আহত নিহত মানুষ আর রক্তাভ অস্ত্রের আড়ালে
আমি মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলাম কাবুলের ঝলমলে রোদ্দুর বিকেল
নাশপাতি বাগানের পাতা, পাহাড়চূড়ায় বৈকালি তুষার
ঘাগরা বোরকাপরা কাবুলি রমণীদের দীর্ঘ ছায়া
ঝিমঝিম রোদ্দুরের মাঝ কেটে চলে যাওয়া পিচপেষা পথ
এবং এই সমস্ত রোদেলা বিকেল
এরপর থেকে
আমি কাবুলের জন্য একটা বিকেল নির্বাচন করলাম
মাদরাসার হেফজখানার জানালা দিয়ে বিকেলরোদে
মেহেদিপাতা নড়তে দেখলে
আমি কোরআনিক আয়াত মুখস্থ করতে করতে অনুভব করতাম-
কাবুলের রোদ্দুর এসে গেছে হাতের করতলে
বংশাই নদীর পাড়ে বসে দেখেছি
ঝিলমিল জলে এসেছে কাবুলের রোদেলা বিকেল
রোমান হলিডে সিনেমায় দেখেছি সে রোদ
হ্যাগার্ডের আফ্রিকি অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাসে পেয়েছি সে ঝাঁ ঝাঁ সূর্যদিন
আমার গ্রামে সবার অলক্ষে ধান-দুর্বাঘাসে নেমেছে সে রোদজ্বলা স্মৃতির বায়োস্কোপ
আমার চক্ষুষ্মাণ দৃষ্টিতে বিকেল হলেই
কাবুলের দীর্ঘ রোদ হয়ে যেতো প্রতিটি বাংলা-দিন
কাবুলের জন্য তাই উৎসর্গ করে দিলাম জীবনের কিছু বৈকালিক সময়
আমার পৃথিবীর প্রত্যেকটা রোদগ্র বিকেল হয়ে গেলো কাবুলি বিকেল
এখন রোদ দেখলেই মনে মনে গুনি-
কাবুলে রাখা আমার বরাদ্দকৃত বিকেলগুলো কেমন এখন
প্রিয়তমা
একটা রাত আমি বরাদ্দ রেখেছি জেরুসালেমের জন্য
ফিনিকফোটা জ্যোৎস্নায় জেরুসালেমের আঙিনায় পোহাতে চাই পূর্ণিমা
একটা দুপুর রেখে দিয়েছি আলহামরা প্রাসাদে কাটাবো বলে
গ্রানাদার ওক গাছের হরিদ্রা পাতার ফাঁক গ’লে নিঃশ্বাস নিতে চাই বারকয়েক
একটা ভোর বরাদ্দ আছে ব্যাবিলনের জন্য
একটা সন্ধ্যা ওয়াকফ করা আছে দামেশকের আঙুর বাগানের জন্য
একটা সকাল দান করেছি মেসিডোনিয়ান সিলভার রিভারের জন্য
একটা বেলা দেবো বলে কথা দিয়েছি কাশগড়ের যাযাবর মঙ্গোলদের
কাশ্মিরের জন্য সযত্নে তুলে রেখেছি একটা সুবহে সাদিক
প্রিয়তমা
তোমাকে দেবার মতো কাবুলের ছবিওয়ালা ওই বইটা ছাড়া
এখন আর কিছু নেই নিঃস্ব এ হাতেম তায়ি’র
———–
ইয়া আফরোজা ইয়া আফরোজা কবিতাপুস্তক থেকে

Photo: gettyeimages/WAKIL KOHSAR


Leave a Reply

Your email address will not be published.