করোনা ভাইরাস নিয়ে অনেকে হাসি-ঠাট্টা করছেন, স্যোসাল মিডিয়ায় মজা করছেন। এটা হাসি-ঠাট্টা করার বিষয় নয় ভাই। এ মহামারী স্পষ্ট আল্লাহর আজাব, আমাদের পাপের ফসল, আমাদের কৃতকর্মের শাস্তি। আল্লাহর আজাব-গজব নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করবেন না। আমাদের আগে আরও অনেক জাতি আল্লাহর শাস্তিকে হাসি-ঠাট্টা করে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চেয়েছে। আদ, সামুদ, কওমে লুতের লোকেরা, মুসা নবীর সময়কালের মিশরের জনগণ আল্লাহর শাস্তির প্রাদুর্ভাবের প্রাথমিক দুর্যোগকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে হেলা করেছিল। কিন্তু আল্লাহর অবশ্যম্ভাবী শাস্তি তাদের ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছিল। আমাদের মতো তারাও সে সময়ের সর্বাধুনিক সভ্যতা নির্মাণ করেছিল। নিজেদের প্রকৌশল এবং জ্ঞানের অহমে তারা আল্লাহর শক্তিকে অস্বীকার করেছিল। আজ তারা কেবলই ইতিহাসের বিস্মরণ।আমরাও যেন আজ সেই প্রাগৈতিহাসিক জাতির মতো আচরণ করছি। চেয়ে দেখুন, পৃথিবীর গতিপথ বদলে দেয়া সর্বাধুনিক সভ্যতার মানুষেরা আজ কেমন অসহায় হয়ে আকাশের সাহায্য কামনা করছে। দেখুন, যে সামান্য এক ফোঁটা ওষুধ আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে মানুষ দুরারোগ্য অনেক ব্যাধিকে জয় করে ফেলেছে, তারা অদৃশ্য এক ভাইরাসের সামনে নতজানু হয়ে অকাতরে মারা যাচ্ছে। আজ এক ফোঁটা ওষুধ তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের সকল জ্ঞান, প্রজ্ঞা, আধুনিকতা আর প্রযুক্তির অহংকার।
নিজের কৃত পাপের কথা স্মরণ করুন। জীবনের সকল পাপের খেরোখাতা সঙ্গোপনে চোখের সামনে তুলে ধরুন। চিন্তা করুন, আপনার পাপের শাস্তি কত নির্মম হতে পারে। সেইসব পাপের প্রায়শ্চিত্ত করুন। তওবা করুন, ইস্তেগফার পড়ুন বেশি বেশি। আল্লাহর সামনে নির্লজ্জের মতো নিজের পাপের কথা স্বীকার করুন। আল্লাহর ওলিদের চেয়ে একজন তওবাকারীর দোয়া আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।
এমন দুর্যোগকালে একদল লোকের মনোভাব দেখে ব্যথিত হয়েছি। তাদের বক্তব্য অনেকটা এরকম ‘আমি চাই করোনা বেড়ে যাক… হে আল্লাহ, চায়না, ইতালি, ইরান, আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, স্পেন ধ্বংস হয়ে যাক ৷ করোনা বেড়ে যাক৷ মুসলিমরা রক্ষা পাক ৷’
এ কেমন ধরনের মনোভাব আমাদের? আমাদের রাসুল (সা.) কি এভাবে মানবজাতির জন্য ঘৃনাভরে বদদোয়া করেছেন কখনো? জীবনে একদিন, একবার কোথাও? আল্লাহর রাসুল (সা.) যদি আজ এই বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময়ে দুনিয়ায় বেঁচে থাকতেন তবে তিনিও কি এমন মনোভাব পোষণ করতেন? তিনিও কি এভাবে তার উম্মতের জন্য বদদোয়া করতেন?
তায়েফের লোকেরা রাসুলকে মেরে রক্তাক্ত করে তাদের জনপদ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। ফেরেশতা সামনে দাঁড়ানো, আদেশ দিলেই তায়েফের নাম পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে মুছে ফেলবেন, সকল অধিবাসীসহ। আল্লাহর রাসুল আঁতকে উঠলেন, না না, কক্ষনো না। এদের ক্ষমা করা হোক। হেদায়েত একদিন না একদিন তাদের বিভাসিত করবে।
কে তুমি ভাই, আল্লাহর রাসুলের চেয়ে তার উম্মতের জন্য বেশি দরদী, কে তুমি? তোমরা কারা, যারা আল্লাহর সর্বোত্তম সৃষ্টিকে দুনিয়ার বুক থেকে মুছে ফেলতে চাও? কোন অধিকারে তুমি মানুষের মৃত্যু কামনা করেছো? একজন মানুষকে তুমি সৃষ্টি করেছো? সামান্য একজনকে? যিনি সৃষ্টি করেছেন—যাও গিয়ে জিজ্ঞেস করো তাকে, কতটা ভালোবাসা আর মমতা নিয়ে তিনি একেকজন মানুষ সৃষ্টি করেছেন! কত শত সহস্র বছর ধরে তিনি অযুত নিযুত মানুষকে প্রতিপালন করে আসছেন। তিনি তাদের নাম রেখেছেন ‘আশরাফুল মাখলুকাত’।
আর তুমি মুসলমান নাম ধারণ করে, ইসলামের ধ্বজা উঁচু করে ধরে সেই ‘আশরাফুল মাখলুকাতের’ মৃত্যু কামনা করছো! যাও, ইসলাম কী জিনিস সেটা শিখে এসো তাদের কাছে যারা রাতের আঁধারে দরিদ্র ‘আশরাফুল মাখলুকাতের’ দরজার সামনে খাবার রেখে আসছে। যাও, হাসপাতালের বারান্দায় গিয়ে দেখে এসো সেইসব ডাক্তার, নার্স আর স্বেচ্ছাসেবীদের যারা জীবন হাতের তালুতে রেখে হাসি ফোটাচ্ছে ‘আশরাফুল মাখলুকাতের’ মুখে। যাও গিয়ে শিক্ষা নাও সেইসব মানুষের কাছে যারা সমস্ত ‘আশরাফুল মাখলুকাতের’ রোগমুক্তির জন্য প্রতি নামাজের পর হাত পাতছে আল্লাহর কাছে।
www.worldometers.info/coronavirus/ এই ওয়েবসাইটা সবসময় খোলা রাখি কম্পিউটার-মোবাইল ব্রাউজারে। করোনা-আক্রান্ত প্রত্যেকটা দেশে আক্রান্তের সংখ্যা, মৃতের সংখ্যা, আজকের মৃত্যু, কত সুস্থ হলো—এমন সকল তথ্য সন্নিবেশ করে পরিবেশন করা হয়েছে ওয়েবসাইটে। ওয়েবসাইটটা যখনই ব্রাউজ করার ইচ্ছা করি, মনে মনে আশা থাকে—মৃতের হার যেন এবার কমে যায়। চীন, ইতালি, স্পেন, ইরান, ফ্রান্স…প্রত্যেকটা মৃত্যুই তো আমাদের ক্ষুদ্রতাকে নগ্ন করে তোলে। আধুনিকতা, বিজ্ঞান ও আকাশ জয়ের সকল জ্ঞান মুখ থুবড়ে পড়েছে আজ। প্রত্যেকটা মৃত্যু মানে কেবল অ্যালগারিদমের সংখ্যা নয়, প্রত্যেকটা মৃত্যু মানে একেকজন জলজ্যান্ত আমার মতো মানুষের মৃত্যু। আমার মতোই স্বপ্ন দেখতো তারা, ভালোবাসতো, পাপ করতো, পুণ্য করতো। তারা এখন ব্ল্যাকবোর্ডে কেবলই ভীতিকর সংখ্যা মাত্র।
আমরা দরিদ্র দেশের আরও হতদরিদ্র নাগরিক। আমাদের শাসকেরা অযোগ্য, নেতারা মূর্খ, পেশাজীবীরা লোভাতুর, সাধারণ জনগণ নিষ্পেষিত। মহামারী প্রতিরোধ করতে আমাদের তেমন কোনো প্রস্তুতিই নেই। ঘন জনবসতিপূর্ণ এই দেশে যদি এই মহামারী বিস্তারলাভ করে, হাজার হাজার মানুষ মারা যেতে পারে। বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের মেডি-কিট, বিশেষায়িত পোশাক, কোয়ারেন্টাইন, আধুনিক চিকিৎসা হার মেনে গেছে। সেই তুলনায় আমাদের সচেতনতা ও প্রতিরোধব্যবস্থা হাস্যকরই বলা চলে।
কিন্তু আমাদের রয়েছে সবচে অব্যর্থ অস্ত্র—আল্লাহর কাছে আমাদের দোয়া ও ক্ষমাপ্রার্থনা। এর জন্য কোনো কোয়ারেন্টাইনের প্রয়োজন নেই। সকল অবস্থায় তাঁর শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া আমাদের দ্বিতীয় আর কোনো রাস্তা নেই। আমরা রশির শেষ প্রান্ত ধরে শূন্যে ঝুলছি। তিনি ছেড়ে দিলেই মহাকালের অতলে হারিয়ে যাবো, আর তিনি টেনে তুললেই হয়তো কেবল আমাদের নাম উৎকীর্ণ হবে ভবিষ্যতের ডাটাবেজে।
আল্লাহ, তুমি তোমার রহমতকে সর্বব্যাপী প্লাবিত করো!`আয়ে আল্লাহ! মানুষগুলো তোমার ভয়ে মসজিদে সমবেত হচ্ছে। মহামারীর ভয় তাদেরকে ঘরে আটকে রাখতে পারছে না। তোমার আজাবের ভয়ে তোমার পায়ে এসে আছড়ে পড়ছে। হে আল্লাহ! তোমার করুণার আশ্বাসে আশান্বিত মানুষকে মৃত্যুর পরোয়ানা দিয়ে দণ্ডিত করো না। এই বিশ্ববাসীকে তুমি ক্ষমা করো। মসজিদগুলো বন্ধ হতে দিয়ো না। তোমার ঘরে এসে তোমার নামের জিকির করার অধিকার তাদের ছিনিয়ে নিয়ো না। ভুলপ্রবণ মানুষের ভুলগুলো তুমি তোমার রহমান নামের পরশে মার্জনা করো।’