একটি কম্পিউটারের মূল চালিকাশক্তি হলো প্রসেসর। বাদবাকি RAM, Hard Drive, Motherboard-এর কিছু কাজ আছে। তবে এই প্রসেসরের পারফরমেন্সের ওপরই মূলত নির্ভর করে কম্পিউটারের পারফরমেন্স কেমন হবে। এটি কম্পিউটারের Core বা মূল শক্তির উৎস। প্রসেসর শক্তিশালী হলে সেই কম্পিউটারের অন্যান্য হার্ডওয়্যারও চমৎকার পারফরমেন্স দেয়। ফলে আমরা কম্পিউটারের মাধ্যমে কঠিন কঠিন সব কাজ সমাধা করতে পারি। বিশ্বের প্রধান প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান Intel তাই তাদের প্রসেসরগুলোর নাম দিয়েছে Core i 3, Core i 7, Core i 11 ইত্যাদি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা তাদের প্রসেসরগুলোর শক্তি ও পারফরমেন্স সক্ষমতা দিন দিন বাড়িয়ে চলেছে। কারণ, প্রযুক্তি যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও শক্তিশালী প্রসেসর তৈরি করতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে।
ঠিক এভাবে যদি চিন্তা করি, আমাদের এই মুসলিম দেশটির ধর্মীয় প্রসেসর বা ধর্মীয় শক্তির উৎস – Core কারা? আমরা সহজেই তাদের চিহ্নিত করতে পারব, তারা এই দেশের আলেমসমাজ। আমি আরও নির্দিষ্ট করে যদি বলি, এই বাংলাদেশে ইসলামের Core হলেন কওমি আলেমসমাজ। শত সহস্র বছর ধরে তারা এই বঙ্গভূমিতে ইসলামের উৎস হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইসলাম ও দেশমাতৃকার জন্য তাদের রয়েছে গৌরবজ্জ্বল অতীত পারফরমেন্স। এই মুসলিম সমাজে নিরবচ্ছিন্নভাবে ইসলামের ধারাকে অব্যাহত রাখতে তাদের পারফরমেন্সের তুলনা চলে না।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বঙ্গীয় মুসলিম সমাজের এই Core অংশটি কি বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের শক্তিশালী করতে পারছে? যদি না পারে তাহলে সমাজে এর ফলশ্রুতি ঘটবে নিদারুণ ক্ষতিকরভাবে। যেমন কোনো কম্পিউটারের প্রসেসর যদি দুর্বল থাকে এবং সেই কম্পিউটারে যদি আপনি শক্তিশালী পারমরমেন্সের RAM, Hard Drive, Motherboard ব্যবহার করেন, তবে কম্পিউটার বার বার ক্র্যাশ করবে, কম্পিউটার তার স্বাভাবিক পারফরমেন্সে কাজই করতে পারবে না।
আমাদের সমাজে ঠিক এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সমাজের সার্বিক অবয়ব বেশ দ্রুত গতিতে উন্নত হচ্ছে, কিন্তু ধর্মীয় সমাজের Core অংশটি সেভাবে উন্নত বা আপডেটেড করা হয়নি। ফলশ্রুতিতে যেটা হচ্ছে, সমাজের নানা অংশে ধর্ম ক্র্যাশ করছে, ধর্ম সেখানে তার স্বাভাবিক পারফরমেন্সে কাজ করতে পারছে না। এটি খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়ায় সমাজের সঙ্গে ধর্মের বিরোধ পরিলক্ষিত হয় এবং দিন দিন সেটি চরম আকার ধারণ করে।
কম্পিউটারের যে প্রসেসর, এটাকে বলা হয় চিপ – Chip। এই চিপ তৈরি করা হয় মূল্যবান সিলিকন বালি দিয়ে। এই বালিই কম্পিউটার প্রসেসর বা Chip-এর প্রধান কাঁচামাল। এটি ছাড়া প্রসেসর তৈরি করা সম্ভব নয়। তেমনি ধর্মীয় সমাজের প্রসেসর যে আলেমসমাজ, তাদের কাঁচামাল হলো কওমি মাদরাসাগুলো। এখন এই কাঁচামাল যত উন্নত হবে, প্রসেসর তত উন্নত হবে এবং সর্বোচ্চ পারফরমেন্স দিতে পারবে। কিন্তু প্রসেসর তৈরির এই মূল্যবান কাঁচামাল যদি অনুন্নত হয় এবং তা দিয়ে প্রসেসর তৈরি করা হয়, তাহলে সেগুলো সমাজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেদের পারফরমেন্স আপগ্রেড করতে পারবে না। ফলে সমাজে ধর্ম বার বার ক্র্যাশ করবে। বার বার ক্র্যাশের ফলে প্রসেসর ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে RAM, Hard Drive, Motherboard-ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেমনটা আমরা আমাদের সমাজের দিকে দৃষ্টি দিলে সহজেই বুঝতে পারব।
আমাদের ধর্মীয় প্রসেসরের পারফরমেন্স কেমন হবে, এটা নির্ধারণ করে যেসব প্রতিষ্ঠান, তাদের অন্যতম হলো বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড—বেফাক। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, তারা নিজেরাই জানে না যে তারা একটি জাতির প্রসেসর তৈরির প্রধান প্রকৌশলী। তারা যদি বুঝতো তারা কী তৈরি করছে এবং সমাজের সর্বোচ্চ পারফরমেন্সের জন্য এইসব আলেমের (প্রসেসর) প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, তাহলে এই বাংলাদেশে ইসলাম বার বার ক্র্যাশ করত না। কেননা, প্রসেসর এবং RAM, Hard Drive, Motherboard সব যদি সেম কনফিগারেশনের হয় তাহলে সেখান থেকে অবশ্যই আপনি বেটার পারফরমেন্স পাবেন। কিন্তু যখনই প্রসেসরের কনফিগারেশন অন্যান্য যন্ত্রাংশের চেয়ে পুরোনো মডেলের হয় তখন সেখানে ক্র্যাশ অবশ্যম্ভাবী। যেমনটি আমরা বছরের পর বছর ধরে দেখে আসছি। প্রসেসরের স্লো পারফরমেন্সের কারণে সমাজের অন্যান্য যন্ত্রাংশ বার বার তাকে শর্ট সার্কিটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর ফলে ক্ষতি হয়েছে সবারই।
ধর্মীয় শিক্ষার সিলিকন বালি সরবরাহ করার এই প্রতিষ্ঠানটি—বেফাককে আধুনিকায়ন অতীব জরুরি এবং ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমকেও আপগ্রেড করা জরুরি। নইলে ভবিষ্যতে দেখবেন সমাজের প্রসেসর অংশ কিছুদিন পরপরই ক্র্যাশ করছে। সেই ক্র্যাশের ফলে প্রসেসর তো ক্ষতিগ্রস্ত হবেই, ক্ষতি হবে সমাজের অন্যান্য সকল যন্ত্রাংশের। যেগুলোর ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে আমাদের হয়তো কয়েক যুগ লেগে যেতে পারে। তাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে দ্রুত এবং সঠিকভাবে।