এই যে কিশোর বয়স, এই বয়সটা স্বাধীনতা চায়। বিস্তর স্বাধীনতা। একটা ছেলে শৈশব থেকে যখন কৈশরে পা দেয়, পৌরুষসুলভ গোঁফ গজানো শুরু করে ঠোঁটের উপর, মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হয়; তখন তারা মনে করে, আর বাকি কোথায়? আমি তো যথেষ্ট বড় হয়ে গেছি। আর সবার মতো পরিণত নারী-পুরুষ আমিও। এখন তো আমি আমার নিজের ভালো-মন্দটা বুঝতে পারি। ভব দুনিয়ার অনেক চলতি জ্ঞান, দোকানদারের ছলচাতুরি, ধর্ম-রাজনীতির কূটিল নীতি, নেট-সোস্যালের ছলা-কলা, বিপরীত জেন্ডারের চোখ আর ঠোঁটের ইশারাও বুঝতে পারি। তবু আমাকে এখনও কেন মা-বাবা স্বাধীনতা দেয় না? আমি পরিণত। আমি কি তাদের চেয়ে কম বুঝি? আমি কি কম জানি?

প্রবলেমটা হলো অভিজ্ঞতার। মানতেই হবে, ভালো-মন্দ বুঝতে পারার বয়স তোমার হয়েছে। কিন্তু ভালো-মন্দ পরখ করে সেটা গ্রহণ করার জ্ঞান তোমার নেই। ভালো বা মন্দ, কোনটা তুমি গ্রহণ করবে, এটা শুধু জ্ঞান দিয়ে যাচাই করা যায় না। এটা যাচাই করতে হয় অভিজ্ঞতা দিয়ে। অভিজ্ঞতা এমন এক বিদ্যা, যেটা শুধুমাত্র বই-পুস্তক বা সাবালকত্ব দিয়ে অর্জন হয় না। এটা অর্জন করতে হয় সময় দিয়ে, সময়ের সঙ্গে জীবন চলতে চলতে।
একটা কথা আছে না, জ্ঞানের প্রথম স্তরে তুমি অহংকারী হবে। মনে করবে, তুমি সব জেনে ফেলেছো। দ্বিতীয় স্তরে তুমি বিনয়ী হবে। আরও জানার আগ্রহ তোমার বাড়তে থাকবে। তৃতীয় স্তরে এসে তোমার নিজেকে অজ্ঞ মনে হবে। মনে হতে থাকবে, তুমি আসলে কিছুই জানো না।
জ্ঞানের এই দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরে যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি না আসতে পারবে, ততক্ষণ তোমার অভিজ্ঞতা অপূর্ণ রয়ে যাবে।
১৮-২০ বছর বয়স হওয়া তক তুমি বহু বহু পুস্তক পড়ে ফেললে, নানা রকম জ্ঞান অর্জন করে নিলে। তার মানে এই না যে ভালো-মন্দ বিষয়ে তোমার বিচার তোমার মা-বাবা বা শিক্ষকের চেয়ে অধিক কার্যকরী হবে। পুস্তকী বিদ্যা তোমাকে ভালো-মন্দের ডেফিনেশন জানাবে, কিন্তু প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা বাস্তবে দেখায় যে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ। পুস্তকী ডেফিনেশন আর প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতার ফারাক অনেকখানি।
প্রত্যেক মা-বাবা বা শিক্ষক চান তার ছেলে বা ছাত্র স্বাধীনভাবে বড় হোক। নিজের ভালো-মন্দ নিজেই যদি সঠিকভাবে পরখ করতে শিখে নেয় কোনো সন্তান, কোন মা-বাবা না খুশি হন? কিন্তু সন্তান বা ছাত্রকে স্বাধীনতা দেয়ার পাশাপাশি তাকে সঠিক গাইডেন্স করাও জরুরি। সঠিক গাইডেন্স না দিতে পারলে আপনার সন্তান যদি বিপথে যায়, দোষ তাকে কতটা দেয়া যায়? এই পৃথিবীর অযুত নিযুত সন্তান/ছাত্র শুধুমাত্র সঠিক গাইডেন্স না পাবার কারণে পথ ভুলে বিপথে চলে যায়। আপনি আপনার আশপাশে তাকালে এমন অগণিত উদাহরণ দেখতে পাবেন।
একটা ঘুড়ি যখন আকাশে উড়ে তখন সে স্বাধীনভাবেই উড়ে। মুক্ত স্বাধীন বাতাস পেলে উত্তুঙ্গ ঘুড়ি তো উড়তে চাইবেই। কিন্তু আপনার হাতে যখন নাটাই থাকবে, নাটাইয়ে টান দিয়ে আপনি ঘুড়িকে ডানে বা বাঁয়ে নিয়ে যেতে পারেন, যখন ইচ্ছা সেটাকে আরও উঁচুয় আবার যখন প্রয়োজন তখন নিচে নামিয়ে আনতে পারেন। আপনি যদি পড়ে যাবার ভয়ে ঘুড়ি কখনো আকাশে না উড়ান তবে ঘুড়ি মুক্ত আকাশে উড়বে কীভাবে? আপনার হাতে নাটাই রেখে ঘুড়িকে উড়তে দিন। প্রয়োজনে ডানের পথ দেখান, প্রয়োজনে বাঁয়ের। কখনো তার অগ্রগতি দেখে আরও উঁচুয় উড়তে দিন, প্রবল বাতাসের ঝঞ্ঝা দেখলে তাকে নিচে নামিয়ে আনুন।
কিশোর-কিশোরীর স্বাধীনতা মানে নিজে যা ভালো বুঝি তাই করার নাম না।
তেমনি অভিভাবকের স্বাধীনতা মানে সন্তানকে সঠিক গাইডেন্সের মাধ্যমে উড়তে শেখানো।

 


Leave a Reply

Your email address will not be published.