আমাদের দেশের পুরো এডুকেশন সিস্টেম টিকে আছে অন্ধবিশ্বাসের ওপর। কিসের ওপর অন্ধবিশ্বাস? পশ্চিমা দাস তৈরির অন্ধবিশ্বাস। জিপিএ ৫, ভালো রেজাল্ট, ব্রিটিশ একসেন্টের ইংরেজি, মোটা মাইনের চাকরির প্রতিশ্রুতি—এই বিধিবদ্ধ দাস যে কারখানায় ভালো বানায়, আমরা সেটাকেই বলি ঈর্ষণীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

বুয়েট থেকে শুরু করে ভিকারুন্নিসা, নটরডেম, ক্যাডেট কলেজ ইত্যাদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমাদের কেবল পশ্চিমাদের এই কনসেপ্টই আত্মস্থ করিয়েছে—ভালো রেজাল্ট না হলে এই সমাজে তোমার মূল্য কী? তুমি সমাজের বোঝা, কোথাও চাকরি হবে না তোমার, তোমাকে দিয়ে হবে না…ইত্যকার বৈষম্যমূলক বাণী তো আমাদেরই তৈরি। আমাদের কাছে ভালো রেজাল্টই সব।

আমরা কখনো ভালোমানুষ, উত্তম ইনসান হওয়ার জন্য আমাদের সন্তানদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাই না। আমরা তাদের পাঠাই কেবলই চাকরির জন্য যোগ্য করে তোলার কারখানায়। সেখানে গিয়ে সে পশ্চিমা কনসেপ্ট আত্মস্থ করে আসে। কর্পোরেট জব, প্রমোশন, সেকেন্ড গ্রেড স্যালারি, হাইলি এক্সপেরিয়েন্সড, অ্যাম্বিশাস লাইফ—এসবই তো আমরা কামনা করি আমাদের সন্তানের কাছে।

এই ছেলে যখন কর্মক্ষেত্রে গিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক আর সরকারি-বেসরকারি তহবিল গিলে খায়, তখন আমরা দোষ দেই আমাদের কপালকে। কপাল নয়, আমরা নিজেরাই তৈরি করছি আমাদের ফ্রাংকেনস্টাইন দৈত্য। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাই এমন হয়ে গেছে, এই এডুকেশন কারখানা থেকে যে বেরুবে সে টাকার এক বুভুক্ষা দানব হয়ে বেরুবে। তার অর্থক্ষুধা নিবৃত্ত করতে সে নৈতিকতার কোনো ধারই ধারবে না। কারণ, অন্যের হক মেরে খাওয়া মহাপাপ—এই নৈতিক শিক্ষাটা তো আপনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তাকে দেননি। তাকে কখনো শেখানোই হয়নি যে যে জিপিএ ৫ অর্জনের চেয়ে বেশি জরুরি তোমার ৬ রিপুকে বশীভূত রাখা—কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য (হিংসা)।

আমাদের সকল প্রকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আমি অনুরোধ করব, আপনারা আপনাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভালোমানুষ হিসেবে বড় হওয়া শিক্ষা দিন। একজন ভালো স্টুডেন্ট নিজেকে দরিদ্র থেকে ‘বড়লোকে’ পরিবর্তন করতে পারে, কিন্তু একজন ভালোমানুষ পুরো একটি জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। যেমন বঙ্গবন্ধু পেরেছিলেন।