Abu ubayda’র এই গানটা নিয়ে আমার নিজস্ব একটা গল্প আছে। গল্পটা বলি।

উবায়দার সঙ্গে পরিচয় আমাদের বন্ধু শাকীর এহসানুল্লাহ এবং তানভীর এনায়েতের মাধ্যমে, তা-ও আট-দশ বছর আগে। উবায়দা থাকত কিশোরগঞ্জে, গ্রাফিকসের কাজ করত আর পার্ট টাইমে গান গাইত। যদিও গানটাই ওর প্রাণ, কিন্তু সংসারের উপার্জনের জন্য কাজ না করে তো উপায় নেই। মাঝে মাঝে রিল্যাক্স হওয়ার জন্য ঢাকা আসত আমাদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য। ও আসলে সেদিন আমাদের বাসা কিংবা অফিসে জশনে জুলুসের আয়োজন হতো। সারারাত কেটে যেত ওর গান শুনে শুনে।
সেই থেকে ওকে আমরা বলে আসছি, গানটাকে প্রফেশনালি নাও। নিজের ভালোবাসাকে মরতে দিয়ো না। ‘শুরু করব ভাই, শুরু করব…’ এভাবে বলতে বলতে দিন যেতে থাকে।
২০১৫ সালের দিকে, এক রাতে পল্টনে আমাদের অফিসে আমরা সবাই আড্ডা দিচ্ছি। উবায়দাও আছে। সে অনেক্ষণ ধরে একটা ফেসবুক পোস্ট লেখার চেষ্টা করছে। লেখাটা তার মাকে নিয়ে, যে মা অনেক আগেই তাকে ছেড়ে তারার দেশে চলে গেছে। কিছুটা লিখে আমার কাছে এসে বলল, ভাই, লেখাটা একটু ঘষামাজা কইরা দেন, আমি পারতিছি না।
উবায়দার মা নেই, আমি জানি। এ কারণেই কি-না, ওর প্রতি আমার অবাধ্য স্নেহের কোনো সীমা নেই। মা-হীন পৃথিবী কল্পনা করে যেখানে আমি শিউরে উঠি, সেখানে মাকে ছাড়া একজন বাউণ্ডুলে যুবক তার শৈশব কৈশোর কাটিয়েছে। অগণিত ব্যথার দহন একা সয়েছে, কাউকে জানতে দেয়নি কখনো।
আমি উবায়দার লেখাটা ঘষামাজা করে দিলাম। পোস্ট করার পর লেখাটা ভাইরাল হলো কিছুক্ষণের মধ্যে। সেটা দেখে আবু উবায়দার সে কি উচ্ছ্বাস!
বছর দুয়েক আগে এক রাতে একটা গানের কথা ও ভয়েস রেকর্ডিং মেসেজে দিয়ে বলল, ভাই, গানটা লিখতিছি, কিন্তু আর পারতিছি না। আপনে একটু দেখেন না…!
আমি জীবনে গান লিখি নাই। গানের সুরের সঙ্গে আমার কবিতার পঙক্তির খুব একটা বনে না। কিন্তু যেহেতু গানটি মাকে নিয়ে লেখা, বুঝলাম, উবায়দার তার মাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছে গানটি। যে মায়ের জন্য তার মন পোড়ে। আমি বললাম, আচ্ছা দেখি…!
রাতের দু ঘণ্টা সময় ব্যয় করে আমি পাঁচটি লাইন মাত্র লিখতে পারলাম। লেখার সময় বার বার মনে পড়েছে উবায়দার কথা, ওর মায়ের কথা, এমনকি আমার মায়ের কথাও! আমি ঝাপসা চোখ নিয়ে লাইনগুলো লিখেছিলাম―
পাও কি আমার মনের খবর মাগো
আমার চোখের অশ্রু দেখেও কাঁদো,
ব্যথায় আমার বুক-ভাঙা হয়ে গেলে
তারার দেশে আমিও যাবো চলে

চাই না যেতে একলা হয়ে নীরব কবর গাঁয়


Leave a Reply

Your email address will not be published.