আফরিনের ঘুম ভাঙলো শীতল অনুভূতি নিয়ে। কার্তিকের এই ভোরবেলাতেও যে এমন জাঁকানো শীত নামতে পারে, তার ধারণা ছিলো না। এমনিতেই সে শীতকাতুরে, তার ওপর কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমায়নি। রাতে যখন বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো তখন বুঝা যায়নি শেষরাতে এমন শীত পড়বে। এখন গায়ের উপর কাঁথা দেখে বুঝতে পারলো, এটা নাঈমের কাজ। শীতল অনুভূতি নিয়ে ঘুম থেকে জাগার পর গায়ে কাঁথা টেনে আবার ঘুমানোর মধ্যে যে কী আরাম, নাঈম যদি তা বুঝতো! আফরিন বিছানায় হাত দিয়ে নাঈমকে খুঁজলো।
বাথরুমে জল পড়ার শব্দ হচ্ছে। নাঈম হয়তো অজু করছে। ফজরের আজান কি হয়ে গেছে? ওহ খোদা! এই শীত শীত ভোরে কেবল কাঁথা মুড়ি দিয়ে একটু আরাম করে শুলাম, এখন আবার উঠে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে অজু করতে হবে!
বাথরুম থেকে বেরিয়ে নাঈম দেখলো, আফরিন কাঁথা মুড়ি দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। রুমে হালকা আলোর বাতি। আফরিনকে ডাকবে কি ডাকবে না, ভাবলো একবার। থাক, আরেকটু ঘুমাক। মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে এসে ডাকলে হবে। তখনও ফজরের সময় অনেকটা থাকবে।
নাঈম পাঞ্জাবি-টুপি পরে দরজা খোলার জন্য এগিয়ে গেলো। এমন সময় আফরিন ডাক দিলো পেছন থেকে—
‘এই শোনেন।’
‘জেগে গেছো তুমি? আমি ভাবলাম মসজিদ থেকে এসে ডাকবো তোমাকে। কী, বলো?’
‘আজকে আমার নামাজটা একটু পড়ে দেন না! আমার খুব শীত করছে।’
নাঈম হেসে ফেললো। বিছানার দিকে এগিয়ে এসে আফরিনকে জড়িয়ে ধরলো। চেষ্টা করলো খানিকটা উষ্ণতা দেবার।
‘এখন শীত কমেছে?’
আফরিন চোখ বন্ধ রেখেই বললো ‘না, কমেনি। দেন না একদিন একটু আমার নামাজটা পড়ে! আরেকদিন আপনারটা আমি পড়ে দিবো।’
‘আচ্ছা, মসজিদে গিয়ে আগে তোমারটা পড়বো, তারপর আমারটা জামাতে পড়বো। ঠিক আছে?’
আফরিন হাসলো, ‘ওকে! আমার লক্ষী আউলিয়া জামাই।’
নাঈম মুখে হাসি নিয়ে মসজিদের জন্য বেরিয়ে গেলো। নাঈম জানে, আফরিন ঠিকই উঠে যাবে। নামাজের ব্যাপারে তার চেয়ে আফরিন অনেক বেশি সচেতন।
নাঈম নামাজ পড়ে এসে দেখে, আফরিন সেজদার ভঙ্গিতে জায়নামাজেই ঘুমিয়ে পড়েছে। এভাবে ঘুমাতে দেখে নাঈম তাকে ডাক দিলো, ‘আফরিন, আরে এভাবে কেউ ঘুমায়? উঠো, বিছানায় গিয়ে শোও!’
আফরিন নাঈমের ডাকে জায়নামাজে উঠে বসলো। তার চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু। দেখতে বাচ্চা মেয়েদের মতো লাগছে। ভোরের মতোই স্নিগ্ধ লাগছে তাকে।
আফরিন অনেক কষ্টে চোখ খুললো। আধচোখ খুলে নাঈমকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, ‘এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?’
নাঈম ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি নিয়ে বললো, ‘পৃথিবীতে অসংখ্য সুন্দরি মেয়ে আছে। কিন্তু আমার চোখে তুমি বিশ্বসুন্দরী। বিশ্বসুন্দরী দেখার ভাগ্য সবার কপালে জোটে না। তাই তাকিয়ে আছি।’
‘মাইর খাইছেন?’
‘বিশ্বসুন্দরীর হাতে মাইর খাওয়ার সৌভাগ্য হেলায় হারানো যায় না। আমি প্রস্তুত।’