আমার বই পড়ার নেশাটা হয়েছিল কীভাবে, জানেন? হেফজখানায়। আমি তখন ১২-১৩ বছরের সদ্য কিশোর। আমাদের হেফজখানায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটা বইয়ের আলমারি ছিল। সেই আলমারিতে ছিল হরেক স্বাদের বই। সবক পড়তে পড়তে সেগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম, এত বই এগুলো কে পড়ে?

একদিন আমাদের ছোট হুজুর কী মনে করে আলমারির চাবি আমার জিম্মায় দিয়ে বললেন, ‘বিকেলে এদিক সেদিক ঘোরাফেরা না করে এখান থেকে বই নিয়ে তো পড়তে পারিস!’

আমি কৌতূহল মেটাতে সেই আলমারি থেকে একটা দুটো বই নিয়ে ছবি দেখতে শুরু করলাম। সেই ছবি দেখার ফুরসতে পরিচয় হয়ে গেল পাকিস্তানী লেখক নসীম হিজাজীর অনূদিত বইয়ের সঙ্গে। মরণজয়ী, শেষ প্রান্তর, হেজাজের কাফেলা, আঁধার রাতের মুসাফির – এ সমস্ত বইগুলো আমাকে নেশাতুর বানিয়ে ফেলল। এবং সেই যে শুরু হলো, আমার বইয়ের নেশা আর কাটেনি।

কয়েকদিন আগে নিচের ছবিগুলো ইনবক্সে পাঠালেন জামিআ শামসুল উলুম দারুসসুন্নাহ মানিকনগর, মুগদা, ঢাকা’র এক শিক্ষক। তার হেফজখানার ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে পড়ছে আমার লেখা সাহাবি সিরিজ, দরবেশ সিরিজ, একটি আয়াত একটি গল্প সিরিজগুলো। ছবিগুলো দেখে আমি যেন আমার সেই হেফজখানার কৈশোরে ফিরে গেলাম।

আমি শিশুদের জন্য যেসব বই লিখেছি, সেগুলো মূলত লিখতে চেয়েছি এই সকল শিশুদের জন্য। যারা মাদরাসা বা স্কুলে পড়ছে তো ঠিক, কিন্তু তাদের উপযোগী ইসলামি বই পড়ার সুযোগ তারা পাচ্ছে না। কারণ, শিশুদের জন্য সেরকম বই-ই নেই আমাদের প্রকাশনা জগতে। আমার বইগুলো বাজারে আসার পর বিগত দুই বছরে অবশ্য বেশ কিছু প্রকাশনা শিশুদের জন্য নতুন নতুন বই নিয়ে আসছে। এ বড় আনন্দের সংবাদ!

মাদরাসা-স্কুলের শিশুরা পড়ছে রঙিন ছবিওয়ালা বই। রঙিন ছবি দেখতে দেখতে তাদের পরিচয় হচ্ছে দিগ্বিজয়ী সাহাবিদের সঙ্গে, দ্বীনের সাধক দরবেশদের সঙ্গে, কুরআনের আয়াতের সঙ্গে, জান্নাতের সঙ্গে এবং সবচে বড় কথা হলো, এই বইগুলো তাদের ভেতরে তৈরি করে দিচ্ছে এক সৃষ্টিশীল মনন। যে মনন ভবিষ্যতে তাদের ভেতর তৈরি করবে জায়িদ ইবনে সাবিত, ইবনে তাইমিয়া, শাহজালালের মতো দ্বীনের রাহবার।